দেশে রাজনৈতিক টানাপোড়েন
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৫:৫০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার বাস্তবায়নের সুপারিশে স্পষ্ট এক রাজনৈতিক টানাপোড়েনে পড়েছে দেশ। নানা বিষয় নিয়ে প্রধান দুই দল এখন বিপরীতমুখী অবস্থানে। জামায়াত চায় নির্বাচনের আগে গণভোট, বিএনপি চায় নির্বাচনের দিন গণভোট। বিএনপি চায় জোট হলেও প্রতীকের স্বাধীনতা, জামায়াতসহ অধিকাংশ দল চায় দলীয় প্রতীকে ভোট। জামায়াত চায় পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, বিএনপি এর পুরোপুরি বিপক্ষে। জামায়াতসহ অধিকাংশ দল চায় এখনই জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, বিএনপি চায় পরে। এভাবেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থানে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল।
এ অবস্থায় অনাগত দিনগুলিতে দেশে কি ঘটছে-সেদিকেই তাকিয়ে সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ফেব্রæয়ারীতে ভোটের সুষ্টু পরিবেশ নিয়েই শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। এমন শঙ্কার মাঝে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও বিপরীতমুখী বক্তব্য দিতে দেখা গেছে বিএনপি-জামায়াতকে।
বিএনপি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা সভায় কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, দেখা গেল, যখন এটা (সুপারিশ) তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) উপস্থাপন করল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে, তখন সেটায় অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে তাঁরা যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো যেন সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, তেমনটা বলেছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁরা আস্থা-বিশ্বাস রেখেছিলেন। কিন্তু সেই আস্থা, বিশ্বাসের সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যেটা তাঁরা তাদের কাছ থেকে আশা করেননি।
বিএনপি সংস্কারের পক্ষের দল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মতভেদ থাকলেও তাঁরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। যেসব প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত ছিল, সেখানে তাঁরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে তাঁরা সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন। জনগণ ভোট না দিলে বাস্তবায়ন করবেন না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের মতভেদ থাকলেও মূল যে সনদ, সেই সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছিলাম। এটাই নিয়ম যে, আমরা যদি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় যাই, মানুষ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেই বিষয়গুলো আবার সামনে নিয়ে আসব। সেটাকে আমরা পার্লামেন্টে পাস করে দেশের যে পরিবর্তন, সেই পরিবর্তনটা নিয়ে আসব।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নেই। গণভোট নির্বাচনের দিনই হবে, সে কথা তাঁরা পরিষ্কার করে বলেছেন। সেখানে দুটো ব্যালট থাকবে—একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য।
জামায়াত বলছে, বিএনপি অন্যায়ভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে :
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে একমত হয়ে আমরা সবাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছি। সবকিছু পর্যালোচনা শেষে সবাই একমত হয়েছি, একটি সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদকে গ্রহণ করা হবে এবং এটার ওপর একটা গণভোট হবে। গণভোটের পর যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সংসদের মাধ্যমে ২৭০ দিনে এটাকে সংবিধানে যুক্ত করা হবে। সবকিছু ঠিক, আমরাও রাজি, বিএনপিও রাজি। কিন্তু হঠাৎ করেই বিএনপি পল্টি নিয়েছে। তারা এত দিন ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে থেকে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর এখন বলছে, আমরা এটাকে মানি না। বিএনপি বর্তমানে অন্যায়ভাবে এই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লায় স সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন।
তাহের বলেন, বিএনপি যদি সংস্কার না মানে, তাহলে এই প্রক্রিয়ার শুরুর আগে তারা বলতে পারত। তখন হয়তো বিএনপি ছাড়াই জুলাই সনদ হতো বা হতো না। এতগুলো রাজনৈতিক দলের সময় নষ্ট করে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে সবাই যখন একটি জায়গায় পৌঁছেছে, তখনই বিএনপি সংস্কারের বিরোধিতা করছে। আমি মনে করি, এটি বিএনপির দায়িত্বহীনতার পরিচয়। বিএনপি পরিকল্পিতভাবে দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আগামী ফেব্রæয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরির একটি অপকৌশল অবলম্বন করেছে তারা।
তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামী শুরু থেকেই বলছে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়েই সংস্কার করতে হবে। কারণ, জনগণই ক্ষমতার উৎস। এখন বিএনপি বলছে, আমরা গণভোট মানি, তবে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই সঙ্গে হতে হবে। গণভোট হচ্ছে সংস্কারের জন্য আর জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে সরকার গঠনের জন্য। তারা তালের রস আর রামের রস একসাথে মেশাতে চায়। বিএনপি সব জায়গায় গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।








