ব্যাটারিচালিত রিকশা ইস্যুতে হার্ডলাইনে পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ৮:৩৬:১৫ অপরাহ্ন
সিপিবি নেতা সুমনসহ আটক ২৩

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট নগরীতে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধ করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে পুলিশ। ব্যাটারি রিকশা চালকের আন্দোলনের নামে সিলেটকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হার্ডলাইনে রয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। ইতোমধ্যে সিপিবি নেতাসহ ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে ইন্ধনের অভিযোগে সিপিবি নেতা আনোয়ার হোসেন সুমনকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে নগরের আখালিয়া কালিবাড়ি এলাকার বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। একই সাথে ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর সিলেট কার্যালয় থেকে ২২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে নগরীর আম্বরখানায় বাসদের কার্যালয় থেকে তাদের আটক করে কতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও বাসদ নেতারা বলছেন, পাঠচক্র চলাকালে বাসদ কার্যালয় ঘেরাও করে ২২ নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে আসে পুলিশ। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
শনিবার (১ নভেম্বর) এর সত্যতা নিশ্চিত করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, নগরীতে ব্যাটারি রিকশা চালকদের আন্দোলনের নামে উসকানিমূলক কর্মকান্ড এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) গেট ও সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুরের ঘটনায় সুমনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। একারণেই তাকে আটক করা হয়েছে। দ্রæত বিচার আইনের এ দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে নগরীর আম্বরখানা বাসদের কার্যালয় থেকে ২২ জনকে আটক করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও শনিবার ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকরা নগরে কর্মসূচী করতে চেয়েছিলো। এ ধরণের কর্মকাÐে জড়িত থাকা সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগের সত্যতা পেলে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।তবে বাসদের সিলেট জেলা সভাপতি আবু জাফর বলেন, ব্যাটারি রিকশার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াসহ বিভ্নি দাবিতে শনিবার নগরের চৌহাট্টা থেকে আমাদের পূর্বঘোষিত ‘ভ‚খা মিছিল’ কর্মসূচী ছিলো। কিন্তু শুক্রবার রাতে পুলিশ এ কর্মসূচীতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আমরা কর্মসূচী স্থগিত করি। কিন্তু রাতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমরা সকল শ্রমিককে বিষয়টি অবহিত করতে পারিনি। তাই শনিবার সকালে শহীদ মিনার এলাকায় কয়েকজন জড়ো হন। তবে নিজেদের কার্যালয়ে তাদের কেউ ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, কার্যালয়ে আমাদের নিয়মিত পাঠচক্র চলছিলো। সেখানে আচমকা অভিযান চালিয়ে পুরো অফিস ঘেরাও করের ২২ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ৬ ঘন্টা নগরের চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকেরা। এতে আনোয়ার হোসেন সুমনসহ কয়েকজন রাজনীতিক অংশ নেন। ঐদিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি জনিয়ে রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন শ্রমিকেরা। ওই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার এক দিন আগে সিপিবির সুমন ও বাসদের ২২ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় জরুরী সংবাদ সম্মেলন করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে। আমরা দেখতে পেয়েছি, রিকশা শ্রমিকদের আন্দোলনে বাহির থেকে ভাড়া করে লোক আনা হয়েছে। তারা প্রকৃত রিকশা শ্রমিক নয়। কিছু হকারকেও সেখানে জড়ো করা হয়েছে। আমাদের হাতে থাকা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে চিহ্নিত কিছু ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীর উপস্থিতি ছিল। এতে আমাদের সন্দেহ হয়, এ আন্দোলনের আড়ালে অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অধিকাংশ ব্যক্তি সিলেটের নন, এমনকি রিকশা চালকও নন। তৃতীয় কোনো শক্তি আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। ফ্যাসিস্ট শক্তির ওপর ভর করে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চলছে। আমরা তা ব্যর্থ করার চেষ্টা করব। নগরবাসীর সহায়তা চাইছি। নগরে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত নয়, বরং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। তাই ব্যাটারি চালিত রিকশা চালকদের প্রতি আহŸান জানিয়ে কমিশনার বলেন, আমাদের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলুন।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে সিলেট মহানগরীতে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরীর উদ্যোগে পরিচালিত এই অভিযানে বহু রিকশা জব্দ ও একাধিক চার্জিং পয়েন্টের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এরপর থেকে নগরে ব্যাটারি রিকশা চলতে দেওয়া হচ্ছে না।







