ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট নিয়ে বিপত্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০:১৬ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘ছেঁড়া ও ময়লা নোটে বাজার সয়লাব’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষের হাতে, দোকানে, যানবাহনে, ব্যাংকে ছেঁড়া ফাটা ও পুরনো ময়লা নোটে সয়লাব হয়ে গেছে। টাকায় হাত দেয়া যায় না। চাহিদার তুলনায় ব্যাংকগুলোকে নতুন নোট দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এই সংকট আরো প্রকট হয়ে ওঠেছে। এতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন গ্রাহক ও বাহক। চাহিবামাত্র দিতে না নিতে পারছেন না এই নোট। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন মানুষ। এ নিয়ে বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
জানা গেছে, গত এপ্রিলের শুরুতে হঠাৎ নতুন নোট বাজারে ছাড়া বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকে থাকা শেখ মুজিবের ছবি সম্বলিত নতুন নোট বাজারে আসছে না। গত ঈদুল আজহায় নতুন নোট ছাপায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নতুন ছাপানো নোট বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ নতুন নোট ছাপানোই হয়েছে কম। মাত্র ৫২০ কোটি টাকার বিভিন্ন নোট ছাপা হয়েছে। এতে নতুন নোটের পরিবর্তে পুরোনো নোটই ঘুরছে গ্রাহকের হাতে হাতে। মানুষের হাতে প্রচুর ছেঁড়া ফাটা ও পুরনো ময়লা নোটের সুযোগে জমজমাট হয়ে ওঠেছে নতুন টাকার ব্যবসা। বিভিন্ন স্থানে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে ছেঁড়া নোট কিনছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন নোট বাজারে আসার এ বছর পার হয়ে গেছে। তারপরও বাজারে নতুন নোট সহজলভ্য হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্টে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে ছিলো ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা আর জুলাইয়ে ছিলো ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট বা টাকা গ্রহণ করায় নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে ছেঁড়া-ফাটা ও পুরনো ময়লা নোট বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। সেখানে এর আগে পুরনো নোটের বদলে নতুন নোট দেয়া হলেও এবার বেশী অপেক্ষাকৃত কম পুরোনো নোট বিনিময় করা হচ্ছে। নতুন বিধান অনুযায়ী, কোনো নোটের ৯০ শতাংশের বেশী বিদ্যমান থাকলে পুরো অর্থ ফেরত দেয়া হবে। নোটের ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ থাকলে ৫০ শতাংশ ফেরত এবং ৫১ শতাংশের কম থাকলে কোন অর্থ পাওয়া যাবে না। এছাড়া নোট একাধিক খন্ডে বিভক্ত হলে এবং দু’টি প্রান্তের নম্বর মিল থাকলে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ নোট থাকলে ৫০ শতাংশ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। পোড়া নোট অখন্ডিত থাকলে এবং নোটের আয়তন কমপক্ষে ৫১ শতাংশ হলে বা খন্ডিত নোটের দুই প্রান্তের নম্বর মিল থাকলে ৫০ শতাংশ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, আগে ডিজাইন প্রস্তুত ছিলো। শুধু টাকা প্রিন্ট করে বাজারে ছাড়া হতো। এখন সব ধরনের নোট ছাপতে হচ্ছে। আমরা যতোটুকু পেরেছি ছেড়েছি।
বলা বাহুল্য, সময়মতো যথেষ্ট পরিমাণ কাগুজে নোট বাজারে না আসার কারণে বর্তমানে নতুন বা ভালো নোটের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র মূল্যমানের ৫, ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোট বেশী লেনদেন তথা ব্যবহৃত হওয়ায় এগুলোর বেশীর ভাগের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় অর্থাৎ জরাজীর্ণ। দীর্ঘদিন আগেই এসব নোট ময়লা, পুরনো ও ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়া সত্বেও এসব মূল্যমানের নোট বাজারে ছাড়া হয়নি। বর্তমানে আরো দু’টি বহুল ব্যবহৃত মূল্যমানের নোট হচ্ছে ৫০ ও ১০০ টাকার নোট। এগুলোর অবস্থাও বেশ খারাপ হয়ে পড়েছে। বাজার এখন সয়লাব এসব মূল্যমানের জরাজীর্ণ নোটে। অনেকের অভিযোগ, এসব ময়লা নোট দেশে বিভিন্ন মারাত্মক রোগের জীবানু ছড়াচ্ছে। ময়লা ও ছেঁড়া ফাটা নোটের কারণে লোকজন আর্থিক দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রায়ই নোটের মূল্য পেতে কম দামে ব্যবসায়ীদের নিকট এসব নোট বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। নোট বিষয়ে এ ধরনের নজিরবিহীন সমস্যা ও সংকট দূরীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকারের শীর্ষ মহলের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।




