কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রদূত, ২০-এ পা সিকৃবির
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ৮:৪৩:৩১ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : ১৯ পেরিয়ে রোববার (২ নভেম্বর) ২০ বছরে পা রেখেছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯ বছরের এই পথ চলায় দেশের কৃষি উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই অবস্থান করছে এ অঞ্চলের কৃষি উচ্চ শিক্ষার শীর্ষ এই বিদ্যাপিট। নতুন জ্ঞান উদ্ভাবন ও গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত কৃষি প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলেছে।
তথ্য মতে, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০৬ সালের অক্টোবরে চার দলীয় জোট সরকারের সময় জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে আইন পাস হয় সিলেট কৃষি বিশববিদ্যালয়ের। তারপর একই বছরের ২ নভেম্বর তৎকালীন সিলেট ভেটেনারী কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তর করে কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইকবাল হোসাইন একই সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পান। পরে ভেটেনারী কলেজ ক্যাম্পাসেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছরের যাত্রায় ৭টি অনুষদের অধীনে ৪৭টি বিভাগে ৫০টিরও বেশি বিষয়ে ডিগ্রী দিচ্ছে সিকৃবি। দেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে ৩ হাজারেরও বেশি। বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন ২৫ জনেরও বেশি। বর্তমানে পিএইচডি শিক্ষার্থীও চালু রয়েছে। শিক্ষক সংখ্যা ২৫০ জনেরও বেশি। যদিও শুরুতে তিনটি অনুষদ দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির।
জানা গেছে, ১৯ বছরের এই যাত্রায় এ বছর জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ডাটাবেজে স্থান পেয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বৈশ্বিক ডাটাবেজ আনুষ্ঠানিকভাবে সিকৃবির সাময়িকী ‘জার্নাল অব সিলেট অ্যাগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটিকে তার বৈশ্বিক কৃষি বিজ্ঞানবিষয়ক প্ল্যাটফর্মে একীভূত করেছে। ফলে সিকৃবির গবেষণার জন্য বৃহত্তর আন্তর্জাতিক দৃশ্যমানতা, বিশ্বব্যাপী কৃষি বিজ্ঞানে বাংলাদেশের অবদানের স্বীকৃতি এবং সমস্ত প্রকাশিত কাজের জন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেডিট নিশ্চিত হবে। এ ডাটাবেজ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউনিক আইডি বিডিও প্রদান করেছে।
সূত্র মতে, কৃষি শিক্ষায় আলো ছড়াচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। দেশের কৃষি ও কৃষি পণ্য উৎপাদন খাতে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্র্যাজুয়েটরা। বিদেশেও শিক্ষা ও গবেষণায় সমানতালে সুনাম কুড়াচ্ছে তারা। এছাড়া শিক্ষকরা কৃষি প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছেন। যা এসিআই ও স্কয়ার গ্রুপ বাজারজাতও করছে।
ইউজিসির তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পেরিয়ে প্রায় শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে অবস্থান করছে সিকৃবি। ইউজিসির ২০২৩ সালের (প্রকাশিত অক্টোবর-২০২৫) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ ভাগ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি আবাসিক হল রয়েছে।
এ দিকে ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রোববার নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাসে সাজসজ্জা করে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটি। সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। পরে সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদযাপন করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে জুলাই গণঅভূথ্যান উত্তর বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় করণীয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কৃষি শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষকদের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্মিলন ঘটিয়ে কৃষি স্বনির্ভর দেশ গড়বে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পিতা মাতার পরেই শিক্ষকরাই তোমাদের সবচেয়ে অপনজন। শিক্ষকদের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে। তোমাদেরকে মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে হবে। ভদ্র ও নম্রতা মানুষকে বড় হতে শেখায়। তিনি শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অর্জনের আহবান জানান।
প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে। ভবিষ্যতে এখানে কৃষি প্রযুক্তির হাব তৈরি করা হবে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিস্কৃত সকল প্রযুক্তি স্থান পাবে। তিনি বলেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করছেন, কিভাবে কৃষি পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে বাংলাদেশের কৃষি উচ্চ শিক্ষার সেন্টার অব এক্সিলেন্স।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় সিকৃবির অবস্থান। সিকৃবির সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণায় কাজ করতে আগ্রহী সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক এবং বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিকৃবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুব-ই-এলাহী, ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায়, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আসাদ-উদ-দৌলা, প্রক্টর অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. কাওসার হোসাইন। শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন য়র ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন।







