বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ৮:০৯:৩৭ অপরাহ্ন
পিডিবির কাছে পাওনা ২৭ হাজার কোটি টাকা
জালালাবাদ রিপোর্ট : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (বিপিডিবি) কাছে ২৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি বকেয়া থাকায় দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত শঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠানগুলো। আইপিপিগুলো বলছে, পাওনা অর্থ পেতে বিলম্বের ফলে তাদের জ্বালানি ক্রয় ও আর্থিক দায় মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে। একইসঙ্গে তারা সতর্ক করেছে যে, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে খাতটির বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতা ব্যাহত হতে পারে।
তথ্যমতে, বিপিডিবির কাছে ৭০টির বেশি দেশি-বিদেশি আইপিপির বকেয়া পাওনা এখন ২৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে দেশীয় উৎপাদনকারীদের পাওনা প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা, বাকি অর্থ বিদেশি উদ্যোগে পরিচালিত কোম্পানিগুলোর।
আইপিপি মালিকরা বলছেন, নির্ধারিত তারিখের পর ৬ থেকে ৭ মাস পর্যন্ত বিল বকেয়া থাকছে। ফলে পুরো খাতজুড়ে তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিপিডিবি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে যে, এই দীর্ঘসূত্রতা পুরো খাতের টেকসই সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স প্রধান মো. শামীম মিয়া টিবিএসকে বলেন, বকেয়া পরিশোধ না করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের কিছু বিল ৬-৭ মাস ধরে বকেয়া হয়ে আছে। ফলে ঋণদাতারা আমাদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। বিদ্যুৎ খাতের এই দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে আমরা নীতিনির্ধারকদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস লিমিটেডের অধীনে চারটি আইপিপি (মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩৯৩.৩৬ মেগাওয়াট) পরিচালনাকারী কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম বলেন, বিল পরিশোধে বিলম্ব কখনো কখনো নয় মাসও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ, জ্বালানি সংগ্রহ ও উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তাদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা বাড়ছে, হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) ও যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা সম্ভব হচ্ছে না, মেয়াদোত্তীর্ণ এলসি নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না, ব্যাংকগুলো ফোর্সড লোন তৈরি করছে এবং জ্বালানি আমদানির শুল্ক পরিশোধেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।
বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা আইপিপিগুলোর বিল পরিশোধ করছি। তবে অর্থ প্রদান প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে আমরা অর্থ বিভাগের কাছে তহবিল চেয়েছি, অন্যান্য উৎস থেকেও অর্থের সংস্থান করছি।
বিপিডিবি কর্মকর্তারা টিবিএসকে বলেন, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) অনুযায়ী, বকেয়া বিলের ওপর সুদ দিতে বাধ্য বিপিডিবি। এই সুদের হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি নোটের মুনাফার হারের সঙ্গে বাড়তি ৪ শতাংশ যোগ করে হিসাব করা হয়। তারা আরও বলেন, এভাবে বিলম্ব চলতে থাকলে সুদে-আসলে মোট বকেয়া ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা বিপিডিবির আর্থিক বোঝা আরও বাড়িয়ে দেবে।





