হৃদরোগ নিয়ে জরুরী বার্তা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪:১৬ অপরাহ্ন

গতকাল দেখা হলো, কথা হলো সুস্থ সবল মানুষটির সাথে, কিন্তু আজ হঠাৎ সংবাদ পাওয়া গেলো তিনি নেই। জানা গেলো, হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোক করে মারা গেছেন তিনি। কিংবা ফেইসবুক খুলতেই দেখা গেলো পরিচিত কারো মৃত্যুর খবর। জোয়ান তাজা মানুষ। হঠাৎ এমনকি হলো যে তিনি মারা গেলেন। শেষ পর্যন্ত জানা গেলো হার্ট অ্যাটাক কিংবা ব্রেইন স্ট্রোকই তার মৃত্যুর কারণ। এই হচ্ছে বাংলাদেশে হৃদরোগ ও ব্রেইন স্ট্রোকের ভয়াবহ চিত্র বা খবর। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের এক সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে কোন না কোন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন অনুমিত ১ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজার ১৯০ জন। অন্যদিকে দেশে প্রতি বছর নতুন করে ৯ লাখ ৯২ হাজার ৭৩৬ জন হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মানে হচ্ছে প্রতিদিন আনুমানিক ২ হাজার ৭২০ জন হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর প্রতিদিন ৫৬২ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন হৃদরোগে। চিত্রটি রীতিমতো ভীতিকর। তবে আশার কথা দেশের হৃদরোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোন সময়ের তুলনায় হৃদরোগ শনাক্তের পরীক্ষা এখন দেশে বেশী হচ্ছে। জনবল, যন্ত্রপাতি ও হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েছে। পরীক্ষা বেশী হওয়ার কারণে শনাক্ত বেশী হচ্ছে। অন্যদিকে মানুষের কায়িক শ্রম কমেছে, খেলাধুলার সুযোগ কমেছে, শহরে নগরে মানুষের হাঁটার মতো রাস্তার স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে। এসবই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, ‘জাংক ফুড’ বা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবারের ব্যবহার বাড়ছে, এসব খাবারে অভ্যস্ত মানুষ হৃদরোগের শিকার হচ্ছেন বেশী। এদিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এবং আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকরা হৃদরোগ হওয়ার তিনটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ঐ ৩ কারণের জন্য চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের হৃদরোগের ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়।
কারণগুলো হচ্ছে, অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান, কম ঘুম এবং রক্তে শর্করা বৃদ্ধি। অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপানের ফলে শরীরের নানাভাবে ক্ষতি হয়। ধূমপামের কারণে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ফলো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। যে কারণে রক্ত ধমনীতে জমাট বাঁধার আশংকা বেড়ে যায়। এর ফলে হৃদপিন্ড আর মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়। একই সঙ্গে রক্তনালীতে চর্বি, খারাপ কোলেস্টেরল ও ক্যালসিয়াম জমতে থাকে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে। আর যারা রাতের পর রাত জেগে থাকেন বা দিনে ৪ ঘণ্টারও কম ঘুমান, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশী থাকে। অনিয়মিত ঘুম বা অনিদ্রার কারণে হৃদপেশীর সংকোচন ও প্রসারণ অনিয়মিত হয়, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে এথরোসক্লোরেসিসের ঝুঁকি বাড়ে। এক্ষেত্রে ধনীর দেওয়ালের মধ্যে চর্বি কোলেস্টেরোল ও অন্যান্য পদার্থ জমতে থাকে, যাকে বলে ‘প্লাক’। এর ফলে ধমনী সংকীর্ণ হয়ে রক্ত প্রবাহকে বাধা দিতে পারে। এই ব্লকেজ থেকেই স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের আশংকা থাকে। খুব বেশী মিষ্টি জাতীয় খাবার, কোমল পানীয় দোকান থেকে কেনা এনার্জি ড্রিংক, কেক-পেস্ট্রি খেলে এর ঝুঁকি বাড়ে। অনেকেই প্যাকেটজাত ফলের রস, হেলথ ড্রিংক কিনে খান। এগুলোও রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে, যা হার্টের জন্য নিরাপদ নয়।
যা-ই হোক, বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই হৃদরোগ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এর প্রতিরোধে সর্বাগ্রে জীবনযাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ২ কোটি মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার। এটি একটি ভয়াবহ পরিসংখ্যান। তাই হৃদরোগের চিকিৎসার পাশাপাশি এর প্রতিরোধের দিকে বিশেষ নজর দেয়া জরুরী। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের বিশেষ দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।



