কাউন্সিলর আজাদ ও যুবলীগ নেতার বাসায় হামলার ঘটনায় দুটি মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০২৪, ৮:০৫:৫৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও যুবলীগ নেতা শমসের আলী সারের বাসায় হামলায় ঘটনায় এসএমপির শাহপরান (রহ.) থানায় পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে এই অভিযোগ করেন কাউন্সিলর আজাদুর রহমান। এতে ১৪ জন অভিযুক্তের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
আসামীরা হলো- নগরের কল্যাণপুরের মৃত শেখ মখন মিয়ার ছেলে শেখ নজরুল ইসলাম বিজয় (৩০), আলম মিয়ার ছেলে সুহেল (৩২), শেখ কবির উরফে হেরোইন সম্রাট করিবের ছেলে রাব্বি (২২) ও শেখ রুহিত (২০), মো: মান্নান মিয়ার ছেলে তারেক আহমদ (৩১), শাপলাবাগের সাজ্জাদ মিয়ার ছেলে ছামাদ আহমদ (২২), আব্দুর রহিম মল্লিকের ছেলে ফুজায়েল মল্লিক (২০), মিনহাজের ছেলে ইয়াকীন (২০), নাসির (২৩), মহিন মিয়ার ছেলে মুছা খান তপু (২১), কুশিঘাটের বাছিরের ছেলে শাওন (২৩), ভাটাটিকরের আমিন উদ্দিনের ছেলে রিয়াজুল, মোহাম্মদপুরের মৃত মো: জামাল উদ্দিনের ছেলে মো: রাহেল উদ্দিন রাবেন, জসিম মিয়ার ছেলে বোরহান (২৫)। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জন।
অভিযোগে আজাদ উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমানোর সময় বাসার সামনে লোকজনের আনাগোনা শুনতে পান আজাদুর রহমান। পরে দেখতে পান যে অভিযুক্তরা পেট্রল ভর্তি জারিক্যান, আগ্নোয়াস্ত্র, মশাল, হকিস্টিক, রামদা, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাসার সামনে মারমুখী অবস্থান নিয়েছে। এসবের কারণ জিজ্ঞেস করায় তারা চিৎকার দিয়ে আজাদকে বলেন, ‘আমরা তোর জম, আজ তর জীবনের শেষ দিন’। এ কথা বলেই এলোপাতাড়িভাবে বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন অভিযুক্তরা। এতে বাসার প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে। হামলার একপর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে আসলে আসামীরা গুলিবর্ষণ করতে করতে এলাকা ত্যাগ করে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
এদিকে বাসায় হামলা, চাঁদাবাজি, প্রাণনাশের হুমকি, লুটপাটসহ কয়েকটি কারণে থানায় আরেকটি অভিযোগ দিয়েছেন মহানগর যুবলীগের সদস্য শমসের আলী সার (৪৫)। এতে ১৮ জনের নামউল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের ঘটনাতেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
যুবলীগ নেতার অভিযোগ পত্রে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শেখ নজরুল ইসলাম বিজয় (৩০), ছামাদ আহমদ (২২), রাব্বি (২২), রিয়াজুল (২৪), ফুজায়েল মল্লিক (২০), ইয়াকীন (২০), সোহেল (৩২), বোরহান (২৫), নাসির (২৩), মো. রাহেল উদ্দিন রাবেন (৩২), তারেক আহমদ (৩১), মুছা খান তপু (২১), শাওন (২৩), শেখ রুহিত (২০), হারুনুর ইসলাম (২০), সাব্বির (২১), সাইফুল ইসলাম ছফু (৩৭)।
অভিযোগপত্রে যুবলীগ নেতা সার উল্লেখ করেন, আসামীগণ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, ত্রাস সৃষ্টিকারী, জবর দখলকারী। আমি আমার বাড়ীসংলগ্ন বোরহান উদ্দিন রোডে আবীর ভ্যারাইটিজ স্টোর নাম দোকান দিয়ে ভুষি মালের ব্যবসা করছি। গত ২৬ জুন দুপুরে আসামিরা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। আমি আসামীদের অন্যায়ভাবে চাঁদা দাবীর প্রত্যাখান করিলে আসামীরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর ২৭ জুন রাত পৌনে ১২টার সময় হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ আমার বাসা ও দোকানে জোরে প্রবেশ করে আসামীরা। তারা আমার নিকট পূর্বের দাবীকৃত ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমার মাথায়, পিঠে, বুকে ও পায়ে ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যার ভয় দেখায়। তখন আমার কাছে টাকা নাই বলে অনুনয় বিনয় করি। এ সময় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আমার বাসায় ও দোকানে এলোপাথাড়ি ভাবে আঘাত করে আনুমানিক ৩ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। আমার দোকানে ক্যাশে থাকা নগদ ৩৬ হাজার টাকাসহ খুচরা টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। দোকানে থাকা দুধ, বিস্কুট, বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেটসহ ২ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে তারা। একইসঙ্গে আসামীগণ আমার বাসার ভিতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করার পর স্ত্রীর বুকে পিস্তল ধরে তার গলা হতে এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায়। এছাড়া আলমারিতে থাকা নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার, স্ত্রীর রক্ষিত ৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুটপাট করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে বাসার অন্য সদস্যদের এলোপাতাড়ীভাবে মারপিট করেন আসামীরা।
এদিকে, কাউন্সিলর আজাদের বাসায় হামলার ঘটনায় আটক নজরুল, রাহেল, তারেক আহমদ ও ফুজায়েলকে গতকাল শনিবার ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আজাদ বলেন, যারা হামলা চালিয়েছে তাদের পূর্বপুরুষরাও চুরি-ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, হামলা-দখলবাজিসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। বংশানুক্রমে চিহ্নিত ওই অপরাধীচক্র বেপরোয়া হয়ে উঠায় তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান ছিল। ওই ক্ষোভ থেকেই তারা হামলা চালিয়েছে।