সিলেটের সবপয়েন্টে বাড়ছে পানি
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫:০০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের সব নদ-নদীতে বাড়ছে পানি। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও সুরমা, কুশিয়ারা, লোভা, সারি, ডাউকি, সারিগোয়াইন ও ধলাই নদীতে পানি বেড়েছে। ফলে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর বাসিন্দাদের মাঝে ফের বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া রোববারও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৮২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ৩৬ ঘন্টায় সিলেটে ৩৯.২ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৮৬ মি.মি.। ফলে সিলেটের সকল-নদীতে পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘন্টায় সিলেটের পাশাপাশি ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের আভাস রয়েছে। ফলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বর্ষণের কারণে সিলেটে পাহাড় ধসের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ২৩ সে.মি.। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপদসীমার ১৯ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এইসময়ে একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বেড়েছে ৯ সে.মি.। অমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়েছে ১৬ সে.মি.। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৪ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ১২ সে.মি.। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি নতুন করে না বাড়লেও অপরিবর্তিত থাকায় এখনো বিপদসীমার ৮২ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লোভাছড়া পয়েন্টে লোভা’র পানি বেড়েছে ২৭ সে.মি.। সারিঘাট পয়েন্টে সারি’র পানি বেড়েছে ৩৪ সে.মি.। জাফলং পয়েন্টে ডাউকি’র পানি বেড়েছে ৩৬ সে.মি.। গোয়াইনঘাট পয়েন্টে সারি-গোয়াইনের পানি বেড়েছে ২৪ সে.মি.। ইসলামপুর পয়েন্টে ধলাই’র পানি বেড়েছে ২৭ সে.মি.।
জানা গেছে, বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বাড়ছে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি। মেঘালয় সীমান্তের কাছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রবল বেগে ঢলের পানি প্রবেশ করছে। ঢলের এই পানিতে তাহিরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ক্রমেই পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। এতে আবার বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়। গত ১৬ জুনের বন্যার ক্ষত শুকানোর আগেই আবার বন্যার কবলে পড়ছেন তাহিরপুরের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকার কারণে অনেকে ইতোমধ্যে বন্যার পূর্বপ্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৮৭ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে বিগত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে বাড়ছে নদী ও হাওরের পানি। আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এতে নদীর পানি আরও বাড়তে পারে।
এদিকে গত দুই দিন থেকে ভারতের মেঘালয়া রাজ্যের চেরাপুঞ্জি ও আসামের লুসাই-আ্ফরংসহ বিভিন্ন পর্বতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যার কারণে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা, লোভা, পিয়াইন নদী, গোয়াইন নদী ও সারি নদীতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোববার পর্যন্ত এসব পর্বতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। আগামী তিনদিন র্পযন্ত সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয়াসহ পাহাড়ি রাজ্যেসমুহে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে সিলেটে ফের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় টানা আরো ৩ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। তিনি সবাইকে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করেছেন।
এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসারগণকে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যগণকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্ধারকার্য পরিচালনা কারী নৌকা, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে অনুরোধ জানান।
কানাইঘাট থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, উজানের ঢলে লোভা নদী ও সুরমার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। যে কোনো সময় বিপদসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন জানান, আগামী ৭২ ঘন্টা সিলেটে ভারী বর্ষণ হতে পারে। একই সাথে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বাড়তে পারে বৃষ্টির পরিমাণ। ফলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে।