পণতীর্থ ধাম
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ৭:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন
সচ্চিদানন্দ কৃষ্ণ দাস
আজ থেকে প্রায় পাঁচশ বছর পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের লাউড়ের গড় নামক স্থানে এক তীর্থের উৎপত্তি হয়। নাম পণতীর্থ। পঞ্চতত্বের অন্যতম মহবিষ্ণুর অবতার শ্রী অদ্বৈত আচার্য ঠাকুর তাঁর মা নাভাদেবীকে স্নান করানোর নিমিত্তে উক্ত স্থানে সপ্ত গঙ্গার আনয়ন করেন। শ্রীঅদ্বৈত আচার্য ঠাকুর পণ বা প্রতিজ্ঞা করে উক্ত স্থানে সর্বতীর্থের আনয়ন করেছিলেন বলে উক্ত স্থানের নাম হয় পণতীর্থ।
অদ্বৈত প্রকাশ গ্রন্থে উল্লেখ আছে-এক রজনীতে শ্রীঅদ্বৈত আচার্য ঠাকুরের মা স্বপ্নে দর্শন করেন তিনি গঙ্গা জলে স্নান করছেন। পরদিন সকালে রাতের সেই স্বপ্নের কথা তাঁর ছেলে অদ্বৈত আচার্য ঠাকুরকে বলেন। কিন্তু নাভাদেবী বৃদ্ধ হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে গঙ্গা স্নান করা তাঁর পক্ষে মোটেই সম্ভব ছিল না। অদ্বৈত আচার্য ঠাকুর মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন বৃদ্ধ মাকে কিভাবে গঙ্গা স্নান করানো যায়। তখন তাঁর ভাবনায় আসে যেভাবে হোক তিনি এই স্থানেই (লাউড়ে) সপ্ত গঙ্গার আনয়ন করবেন এবং মায়ের গঙ্গা স্নানের অভিলাষ পূরণ করবেন। সেই কথা চিন্তা করে অদ্বৈত আচার্য ঠাকুর লাউড়ের এক ক্ষুদ্র পাথরের উপর ঝরণার জলের ধারায় সপ্তগঙ্গার আনয়ন করেন।
তখন ঝরণার জলের ধারায় তীর্থ পরিপূর্ণ হয়ে গেল আর অদ্বৈত প্রভু তাঁর গর্ভধারিণী মাতাকে সেই জলে স্নান করান। তখন নাভাদেবী সেই জলে অবগাহন করে তাঁর গঙ্গা স্নান সম্পূর্ণ করেন। সেই সময়ে শ্রী অদ্বৈত আচার্য প্রভু গঙ্গাকে পণ বা প্রতিজ্ঞা করান যেন প্রতি বছর চৈত্র মাসের পাপমোচনী একাদশীর পরের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে এই স্থানে অর্থাৎ লাউড়ের জাদুকাঠা নদীতে যেন সপ্তগঙ্গা প্রবাহিত হয়। সেই থেকে আজ অবধি জাদুকাটা নদীতে চৈত্র মাসের মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশি তিথিতে সপ্তগঙ্গা প্রবাহিত হন। যখন যগধ্যা শুরু হয় তখন জাদুকাটা নদীর জলের প্রবাহ আপনা আপনি বেড়ে যায়। অর্থাৎ বৃষ্টি ছাড়াও উক্ত তিথিতে বিশেষ করে যখন যগধ্যা শুরু হয় তখন নদী জলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সেটা যারা স্নান করতে গিয়েছেন তাঁরা দর্শন করে থাকেন ।
প্রতিবছর উক্ত তিথিতে হাজার হাজার পূণ্যার্থী জাদুকাঠা নদীর তীরে সমবেত হন প্রবাহিত সপ্তগঙ্গার জলে স্নান করে নিজেকে পবিত্র করে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হতে। অনেকে মৃত মা, বাবা কিংবা পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পন ক্রিয়া সম্পূর্ণ করে থাকেন। যাদের পশ্চিম বঙ্গ কিংবা গয়া, কাঁসি, বৃন্দাবনে যাবার সামর্থ নেই তাদের জন্য পণতীর্থ ধামে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে ক্রিয়া কর্ম করার বিশেষ সুবিধা। এবারও করোনা প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় পণতীর্থ ধামে গঙ্গাস্নান অনুষ্টিত হবে না। কিন্তু উক্ত তিথিতে জাদুকাটা নদীতে সপ্তগঙ্গার আনয়ন হবে এবং ভক্তবৃন্দ নিজ গৃহে মানষী গঙ্গায় স্নান করে নিজেকে পবিত্র করবেন। আর গঙ্গা মায়ের কাছে প্রার্থনা জানাবেন সপ্ত গঙ্গা যেন তার প্রবাহিত স্রোতে ধরা থেকে সকল প্রকার জরা ভাসিয়ে নিয়ে আমাদেরকে তার বিশুদ্ধ জলে স্নাত করে পরিশুদ্ধ করুন।