দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি জনজীবনে অভিশাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ৭:৫১:২৯ অপরাহ্ন
ইসরাত জাহান
মাছে-ভাতে বাঙালি। সুদূর অতীতকাল থেকেই প্রবহমান এই রীতি অন্যদিকে মোড় নোওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুরু থেকেই বাঙালি কৃষি কাজে আসক্ত ছিল। বাঙালির অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি ছিল কৃষি। এক কথায়, কৃষি নির্ভর জীবনব্যবস্থা। শুধু কৃষিই নয় অনেক বাঙালি রয়েছেন যারা দিনে এনে দিনে খান। সূর্য উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তাদের কাজ চলতেই থাকে। এদের সাথে রয়েছে কিছু চাকুরীজীবী। যাদের মাস শেষের সামান্য বেতন হাতে গোনা কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে পাওয়া কিছু অর্থ যখন ক্রয়ক্ষমতার জন্য অনেক বেশি নগন্য হয়ে পড়ে তখন এদের সামনে নেমে আসে অনেক বড় চিন্তার পাহাড়। কথায় আছে, বাঁচতে হলে কাজ করতে হবে। সেই নীতি মেনে বাঁচার তাগিদে কাজ করে যাচ্ছে মানুষগুলো। কিন্তু তাদের দুঃখের যেন শেষ নেই কয়েকদিন যেতে না যেতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে ধরা দেয়। এইতো খুব বেশি নয় গেল কয়েকমাস আগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে চর্তুদিক থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। কয়েক মাস যেতে না যেতেই আবারও শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে দ্রব্যমূল্য। আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের মানুষগুলো স্বল্প আয়ের মাধ্যমে দিনাতিপাত করে। কিন্তু কয়েকদিন পর পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনঅসন্তোষ সৃষ্টি করে। মহামারীর কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ গুলো পড়েছে বিপাকে। এই মহামারী জনজীবনে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। চাকরিচ্যুত হয়েছে অনেক মানুষ। আবার কিছু মানুষের চাকরি থাকলেও অনেক খাটুনি খেটেও আগের তুলনায় বেতন কম পাচ্ছে। নন-এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের জীবন তিক্ত হয়ে পড়েছে। পরিবারের জন্য দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাতে কিছু কিছু শিক্ষককে ঠিকাদারির কাজ করতেও দেখা গেছে। এরকম অসহায় মূহুর্তে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এসব মানুষগুলোর জীবনে ডেকে নিয়ে আসছে অন্ধকার। এক অন্ধকার ছায়া তাদের জীবনকে গ্রাস করছে। দারিদ্র্যের কশাঘাতে আজ জনজীবন হাহাকার পূর্ণ। প্রত্যেকটা মানুষের আয়ের উৎসে ভাটা পড়েছে। দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খেতে পারলেই হল উক্তিটা আজ নতুনরূপ পেয়েছে। দুবেলা দুমুঠো খাবারের কথা না ভেবে বরং তারা এখন এটাই ভাবছে কীভাবে বেঁচে থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রত্যেকটা দ্রব্য যেমন-চাল, ডাল, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ভোজ্যতেল ইত্যাদি সবকিছুর মূল্য এখন আকাশচুম্বী। বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আগুন লেগেছে আর এই আগুনে জ্বলছে অসহায় সাধারণ মানুষ গুলো।
আয়ের উৎসে লোপ পাওয়া মানুষগুলে আজ খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা না বললেই নয়। এরাই আজ বড্ড সমস্যার সম্মুখীন। এইদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাদের জীবন আজ জর্জরিত। অসহায় এই জীবন নিয়ে ভবঘুরের মতো দিনাতিপাত করছে তারা। এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তাদের জীবনে অভিশাপের ডাক দিয়েছে। একটা মানুষের প্রকৃত আয়ের তুলনায় যখন দ্রব্যেরমূল্য বৃদ্ধি পায় তখনই দেখা দেয় আশাভঙ্গের নিদারূণ যন্ত্রণা। জন্ম হয় একের পর এক করুণ কাহিনির। বাংলাদেশ বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি লাভ করে সুজলা সুফলা, সবুজে ভরপুর এক সোনার বাংলা নামে। কিন্তু আজ সেই সুজলা সুফলা, সবুজে ভরপুর সোনার বাংলা শ্রীহীন হয়ে পড়ছে দুর্নীতির কারণে। মানুষের মধ্যে জেগে উঠছে স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার প্রবণতা। আর তাদের এই প্রবণতাকে সফল করতে তারা বেচে নিচ্ছে অসৎ উপায়কে। অসৎ উপায়কে পুঁজি করে রাতারাতি ধনী হওয়ার এই খেলায় অনেক অসহায় মানুষকে বলী হতে হয়।
দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সিন্ডিকেট। কিছুমহল এই সিন্ডিকেটে মেতে উঠে দ্রব্যরমূল্য বৃদ্ধি করে। অতিরিক্ত মুনাফালোভী এসব ব্যবসায়ীর কারণে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যতবার দ্রব্যেরমূল্য বৃদ্ধি পায় ততবারই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা হয়। তখন বলা হয় যে এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত মহলকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে। কিন্তু সেই শাস্তি আর প্রদান করা হয় না। এতে করে আইন বিভাগের উদাসীনতা দেখা যায়। তাদের এই উদাসীন মনোভাবের কারণে দ্রব্যমূল্য কিছু মানুষের জন্য মারণাস্ত্রে পরিণত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এই লাগামহীন বলগাছাড়া অসহায় মানুষগুলোর জন্য বজ্রাঘাততুল্য। এই অসহায় মানুষগুলোর কথাভেবে উর্ধ্বতন মহলকে সচেতন হয়ে শীঘ্রই এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সবসময় বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেকটা দ্রব্যর মূল্যতালিকা দোকানের সামনে টাঙিয়ে দেওয়া সরকারের খুব শীঘ্রই এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত নাহয় জনমনে যে ক্ষোভের দানা বেঁধেছে তা যে কোন সময় জনবিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে। ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই পারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করতে। সাধারণ মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য সরকার এবং ব্যবসায়ী মহলকে উদার মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠা উচিত। নাহয় অসহায় মানুষগুলোকে খাবারের অভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ