ভারতীয় মুসলমানদের অধিকার রক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০২১, ৯:৩২:২২ অপরাহ্ন
আবদুর রহমান খান
ভারতের সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী সেদেশের মুসলমান সম্প্রদায়কে পরামর্শ দিয়েছেন, তারা যেন তাদের অধিকার রক্ষায় সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। তারা যেন শিক্ষা গ্রহণ এবং ব্যবসা পরিচালনার কাজে মনোযোগী হন এবং কোনোরকম উস্কানিতে জড়িয়ে না পড়েন।
সম্প্রতি প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক পুস্তক “ বাই মেনি এ হ্যাপি এক্সিডেন্ট”-এ এসব উপদেশ দিয়েছেন হামিদ আনসারী। ভারতে এবং ভারতের বাইরে সুধীমহলে এ সময়ের একখানা আলোচিত বই এটি।
গত বছর মার্চ মাসে বইটি লেখা শেষ হলেও করোনার কারণে ছাপার কাজ বিলম্বিত হয়। সম্প্রতি বইটি প্রকাশিত হবার পর এতে আলোচিত রাজনৈতিক দল বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী এবং মুসলিমদের প্রসঙ্গ নিয়ে নতুন কিছু আলোচনার সুত্রপাত হয়েছে।
টানা দুই মেয়াদে ২০০৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন হামিদ আনসারী। ভারতের বিখ্যাত আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী হামিদ আনসারীর রয়েছে চার দশকের কূটনৈতিক পেশার অভিজ্ঞতা। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও তিনি জাতিসঙ্ঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কূটনীতিকের চাকুরী থেকে অবসর নেবার পর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (২০০০-২০০২) এবং জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয় ও জামিয়া মিল্লিয়ায় ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার আগে তিনি ভারতের সংখালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেবার কারণে হামিদ আনসারি সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি শ্রদ্ধার পাত্র হন ।
এতদঞ্চলে একজন প-িত ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত হামিদ আনসারীর রচিত জীবনচরিত গ্রন্থখানি তাই স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষিত-সুধী মহলে ব্যাপক আগ্রহ ও আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
হিন্দুত্ববাদি বিজেপি শাসিত ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক ধারা সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি তার বইয়ে লিখেছেন, ভারতের বহু সম্প্রদায়ের সম্মিলত ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাকে পাল্টে দিতে জোরপুর্বক একক মতবাদ চাপিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। এ জন্য ভাষা, ধর্ম, নৃতাত্বিক পরিচয়, আঞ্চলিক বৈশিষ্ট – এসব স্বাতন্ত্রতা বিলুপ্ত করে এককেন্দ্রিক রূপ দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিজেপির রাজনৈতিক দর্শনের সমালোচনা করে আনসারী লিখেছেন, ২০১৪ সালে বিজেপি’র ইস্তেহারে সংখ্যালঘুদের জন্য কর্মসুচীর উল্লেখ ছিল। ২০১৯ সালে এসে তাদের সঙ্কল্পপত্রে সেসব কর্মসুচীর কথা বাদ দেয়া হয়েছে।
আনসারী উল্লেখ করেছেন, ভারতীয় সংবিধানের ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা নরেন্দ্র মোদির বক্তৃতা -ভাষণে থাকেনা। সমাজতন্ত্রের নামে দেশের ৭৪ ভাগ সম্পদ মাত্র দশভাগ ধনীর হাতে কুক্ষিগত।
নেহেরুর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, কম্যুনিজমকে ভয় পাবার দরকার নেই; কমুনালিজম বরং ভয়ংকর ক্ষতিকারক। এ কথা বর্তমানেও সত্য । সংখাগরিষ্ঠতাবাদি মনোভাব যে কত ক্ষতিকর হতে পারে সেটাই এখন ভারতীয় সমাজে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
উপ-রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তার দপ্তরে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সৌজন্য সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে আনসারী লিখেছেন, মোদীর কাছে যখন জানতে চাওয়া হলো গুজরাটে দাঙ্গা থামাতে সে কেন ভূমিকা পালন করে নি? জবাবে মোদী বলেছে, সে কলঙ্ক ঘুচাতে মুসলিম মেয়েদের জন্য অনেকগুলি স্কুল এবং কলেজ প্রতিষ্ঠা করে দেয়া হয়েছে। তাহলে সেটা কেন মোদী প্রচার করছে না? – এ প্রশ্নের জবাবে মোদী বলেছে, “রাজনৈতিক কারণে আমার পক্ষে এটা বেমানান হবে।”
হামিদ আনসারী ইহুদি এবং শিখ সম্প্রদায়ের উদাহরণ দিয়ে তাদের কাছ থেকে শেখার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ১৯৪৭ সালেও ভারত বিভাগের পর পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় হাজার হাজার শিখ নারী-পুরুষ-শিশু দিল্লীতে এসে আশ্রয় নেয়। দিল্লীর অবস্থাসম্পন্ন শিখেরা তাদের শরণার্থী ভাই-বোনদের জন্য লঙ্গরখানা খুলে খাবার সরবরাহ করার পাশাপাশি তাদের ছেলেমেয়েদের জন স্কুল ও কলেজ ভবন নির্মাণ করে দেয় যাতে তাদের পড়া- লেখা চালু রাখতে পারে।
বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা আমাজান কর্তৃক হামিদ আনসারীর ৩৫০ পৃষ্ঠার এ বইটি এ বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত হবার পর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর সমালোচনা বেরিয়েছে এবং এ প্রসঙ্গে তার সাক্ষাতকারও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে হিন্দুরত্ববাদী বিজেপি নেতারা তাদের দল বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি প্রসঙ্গে আনসারীর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।