সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মে ২০২১, ৯:৫৮:১৬ অপরাহ্ন
সিদরাতুল মুনতাহা
একটি সমাজের দৈনন্দিন ঘটনাবলীর প্রাত্যহিক দলিল হলো সংবাদপত্র। তাই এই সংবাদপত্রকে হতে হবে নির্ভীক ও অকপট, হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন। ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তা বিসর্জন দিয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সংবাদপত্রকে করতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, করতে হবে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম। কিন্তু এসকল দায়িত্ব পালনে প্রতিনিয়ত বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সংবাদপত্র। আজ থেকে বহুদিন আগেই সংবাদপত্রের আবিষ্কার হলেও আজও প্রশ্ন ওঠে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে। কেননা জনগণের মাঝে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশে সংবাদপত্র আজও পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না। একটি সমাজে প্রতিনিয়ত যেসকল ঘটনা ঘটে থাকে সাংবাদিকরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই ঘটনাবলী থেকে সত্য তথ্যের উদঘাটন করে। এমনকি এই করোনাকালীন সময়েও তারা থেমে নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই সত্য তথ্যগুলোর সবটা স্বাধীনভাবে প্রকাশে প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত হয় সংবাদ প্রকাশকরা। কেননা ক্ষমতাশীনরা তাদের স্বার্থে সংবাদপত্রের উপর আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। যার ফলস্বরূপ ক্ষুন্ন হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। বর্তমানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
অজানাকে জানার আকাক্সক্ষা মানুষের বহুকাল আগে থেকেই। এই আকাক্সক্ষা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সংবাদপত্রের। এমন একটি সময় ছিল যখন সংবাদপত্র বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে অন্যান্য জিনিসের মতো সংবাদপত্র সৃষ্টি করতেও মানুষ সক্ষম হয়েছে। আধুনিক জীবনের সাথে সংবাদপত্র এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আমাদের সমাজজীবনে দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিকভাবে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কো ৩ মে তারিখকে ‘বিশ্ব সংবাদপত্র স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ৩ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব সংবাদপত্র স্বাধীনতা দিবস।’ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা ও খবর সংগ্রহে মৃত্যুবরণকারী কিংবা কারাবরণকারী সাংবাদিকদের স্মরণ করা হয় এই দিনে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর জাতীয়ভাবে পালিত হয় ‘বিশ্ব সংবাদপত্র স্বাধীনতা দিবস’। এ দিনে দেশের সকল সাংবাদিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করে থাকে। তবে এবছর করোনাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো কর্মসূচীর আয়োজন করেনি জাতিসংঘ। সেই সাথে বাংলাদেশেও এবছর জাতীয়ভাবে কোনো কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোটার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স এর ২০২০- এর রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের ১৮০ টি দেশের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা ১৫১ তম যা গতবছর ছিল ১৫০ তম। এতে বোঝা যায়, অবস্থার উন্নতি করতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে আরো বেশি শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে।
সংবাদপত্র হলো আধুনিক সভ্যতার একটি শ্রেষ্ঠ দান। তাই এই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করা অতীব জরুরি। আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সাংবাদিক বা সংবাদ প্রকাশকদের নয়। এ দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের, এ দায়িত্ব প্রতিটি দেশের সরকারের। তাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার্থে সরকারসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে নিত্যদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তথ্যাবলি সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠভাবে ও সঠিকভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারে। বর্তমানের এই করোনাকালীন সময়ে সকলে ঘরবন্দী থাকলেও সাংবাদিকরা থাকছে না ঘরে আবদ্ধ হয়ে। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্বেও তারা প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছে সত্য তথ্য উদঘাটন করতে।
কেননা দেশ-বিদেশের করোনা পরিস্থিতি সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে তাদেরকেই। এতে অনেক সাংবাদিকরা হয়তো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, অনেকে হয়তো করেছে মৃত্যুবরণ। তবুও তারা তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে। আজকের এই সংবাদপত্র স্বাধীনতা দিবসে সম্মান জানায় সকল সংবাদকর্মীকে, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা দেশ ও দেশের বাইরের সকল তথ্য প্রতিদিনই পেয়ে যাচ্ছি। তারা যেন সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য আগামীতেও সকলের কাছে পৌছেঁ দিতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে যেন পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন সেই আশায় ব্যক্ত করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়