অতঃপর হার্ড লাইনে সরকার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:১৯:৩৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ প্রতিবেদন:
নভেম্বর ডিসেম্বরে আন্দোলন হবে। ১৪ বছর টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ সরকারের ছিলো জানা। তাই সিলেটের মধ্য জুনের বন্যার কারণে স্থগিত করা পরীক্ষা মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনমাস পিছিয়ে দেয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে নেয়া হয় নভেম্বরে, চলবে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসএসসি ও এইচএসসি এই দুই পাবলিক পরীক্ষা স্পর্শকাতর। তাই এই পরীক্ষা চলাকালে রাজনৈতিক কর্মস‚চি দেয়া কঠিন। কিন্তু বিএনপিও সুবিধা পেয়ে যায় শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করায় ও শনিবার পরীক্ষা না থাকায়। তারা শনিবার দেখে বিভাগীয় সমাবেশের তারিখ ঠিক করে। ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে তারা বেছে নেয় ঢাকার গণসমাবেশ করার জন্য। ঘটনাক্রমে সেটাও শনিবার! ফলে পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারার বাঁধা অতিক্রম করে কৌশলে।
সমাবেশের তারিখকে টার্গেট করে সড়ক ও নৌযান ধর্মঘটের কারণে সমাবেশে মানুষের আগমন বাধাগ্রস্ত হয়, বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ ও নারী কর্মীরা এতো ঝুঁকি নিয়ে দু’দিন আগে উপস্থিত হওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। এরপরেও ধর্মঘট বিএনপির জন্য শাপে বর হয়, কারণ যানবাহন না চলায় আগুন সন্ত্রাস ও গাড়ি ভাঙচুরের বিপদ থেকে তারা বেঁচে যায়। ঢাকার সমাবেশের স্থান নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের ফাঁকে বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশের প্রস্তুতি নেয় গোপনে। চাল-ডাল মজু‚দ করে কেন্দ্রীয় অফিসে। ৭ তারিখ পুলিশ অভিযান চালিয়ে নয়াপল্টন নিয়ন্ত্রণে নেয় সরকার। গুলিতে নিহত হয় একজন, আহত হয় অসংখ্য। কেন্দ্রীয় নেতাসহ কয়েকশ গ্রেফতার হয়। ৮ ডিসেম্বর ডিএমপির কমিশনারের সাথে সমঝোতা বৈঠক হয় বিএনপির। কমলাপুর স্টেডিয়াম বা মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠ, সমাবেশের বিকল্প ভেন্যু হিসেবে ঐক্যমত হয়। আলাপ আলোচনায় সময় ক্ষেপণ করে ৮ তারিখ দিবাগত শেষ রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে বাসা থেকে উঠিয়ে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
৮ ডিসেম্বর সকালেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে হার্ড লাইনে যাবার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের যৌথ সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ মারতে আসলে হাত ভেঙে দেয়া হবে। আগুন সন্ত্রাসী স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবেনা, উন্নয়নের জন্য আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে।’ তিনি তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করার সংকল্প ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর খুনী ও তারেক রহমানকে আশ্রয় দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার হলো, ক্ষমতার পরিবর্তন কোনভাবেই সম্ভব নয়, কারণ বিএনপি ও তার মিত্রদের হাতে ক্ষমতা দেয়া যাবেনা। তিনি সরকারের সাহায্যভোগী ও উপকারভোগী সাংবাদিকদের সাবধান করে বলেন, তাদেরকে দেখে নেয়া হবে। তিনি বলেন মিডিয়া দিয়েছি, আরামে সাংবাদিকরা ব্যবসা করছেন, তবুও কেন বিএনপিকে তোষামোদ করেন, তেল মারেন।
প্রধানমন্ত্রীর বৃহস্পতিবার সকালের বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আচরণের মধ্যে। তারা আলোচনায় সময় ক্ষেপণ করে শেষরাতে এ্যাকশনে গিয়েছেন। আপাতত মনে হচ্ছে সমঝোতার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। দেশে চলবে বিশেষ ধারার গণতন্ত্র।