সংঘবদ্ধ ধর্ষণে বাধা দেয়ায় জাফলংয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী খুন
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ৯:১১:২৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের জাফলংয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গোয়াইনঘাট সার্কেল) প্রবাস কুমার সিংহ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- গোয়াইঘাট উপজেলার মুজিব নগর গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে জব্বার মিয়া, একই গ্রামের বারেক মিয়ার ছেলে বাচ্চু মিয়া ও বুধিগাঁও হাওর গ্রামের হারুণ অর রশিদের ছেলে সেবুল মিয়া।
প্রেস প্রিফিংয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ জানান, আসামি বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া নিয়মিত ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি ভারতীয় খাসিয়াদের বাগান থেকে সুপারি চুরি করতেন। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় চুরিরও অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামি বাচ্চু মিয়া ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। অপর দুইজনও পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে।
গত ১১ ডিসেম্বর রাত ১০টায় বাচ্চু মিয়া, জব্বার মিয়া এবং সেবুল মিয়া জব্বারের ঘরে বসে এক সঙ্গে ইয়াবা সেবন করেন। ইয়াবা সেবনের এক পর্যায়ে তারা তিনজন মিলে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাচ্চু, জব্বার ও সেবুল মিলে কেক, বিস্কুট আর কোমল পানীয়র লোভ দেখিয়ে তামাবিল পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বাজার থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে স্থানীয় একটি টিলায় নিয়ে যান। সেখানে তারা তিনজন মিলে সংঘবদ্ধভাবে ওই নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী বাধা দিলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে লাঠি ও পাথর দিয়ে ওই নারীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মানসিক ভারসাম্যহীন নারী মৃত্যু হয়।
পরদিন সকালে স্থানীয়রা মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত ওই নারীর বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে সিআইডি ও পিবিআই’র ফরেনসিক টিম অজ্ঞাতনামা নারীর পরিচয় শনাক্তের জন্য মরদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ঘটনার আলামত সংগ্রহ করেন।
এ ঘটনায় গত ১২ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহিরুল ইসলাম খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সিলেটের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের দিকনির্দেশনায় ক্লু-লেস এই মামলা আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত জব্বার মিয়াকে ১৫ ডিসেম্বর ও বাচ্চু মিয়াকে ১৮ ডিসেম্বর আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয় এবং সেবুল মিয়াকে ১৯ ডিসেম্বর রাতে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি পাথরের খণ্ড ও নিহত নারীর পরিহিত কাপড়-চোপড় এবং ব্যবহৃত কম্বলের পোড়া অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়।