নাম বদলে ২২ বছর কারারক্ষী অবশেষে গ্রেফতার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:২৫:৫৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নাম তাজুল ইসলাম (৪২)। বাবার নাম মৃত কালা মিয়া ও মা ফিরোজা বেগম। বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের দক্ষিণ শশীদল গ্রামে। এ তথ্য ও পরিচয় গোপন রেখে তিনি ‘মঈন উদ্দিন খান’ নামে কারারক্ষী হিসেবে চাকরিতে ছিলেন। এমন একটি স্পর্শকাতর পদে তিনি ভুয়া পরিচয় ও তথ্য গোপন রেখে চাকরি নিয়েছিলেন। এভাবে কেটে গেলো দীর্ঘ ২২ বছর। তবে চতুর তাজুলের শেষ রক্ষা হয়নি। তার এই প্রতারণার বিষয়টি উঠে আসে গণমাধ্যমের খবরে। এরপর নড়েচড়ে বসে কারা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ২০২২ সালের ৪ আগস্ট প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চাকরির অভিযোগে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানায় মামলা করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে চলে যান। অবশেষে র্যাবের সহায়তায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৩ সেট কারারক্ষী ইউনিফর্ম, একটি জ্যাকেট, একটি রেইনকোট ও ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এসব তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, তাজুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের দক্ষিণ শশীদল গ্রামে। আর যে মঈন উদ্দিন খানের পরিচয়ে তাজুল প্রায় দুই যুগ সরকারি চাকরি করেছেন, সেই মঈন উদ্দিন খানের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামে। তার বাবার নাম নুর উদ্দিন খান।
২০০১ সালে কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে মঈন ও তাজুল দু’জনেই আবেদন করেছিলেন। তাজুল পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন। আর মঈন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে শারীরিক ফিটনেস, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। বলা হয়েছিল, যারা চাকরিতে টিকবেন, তাদের নিয়োগপত্র স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হবে। তাজুল তখন জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার পরিকল্পনা আটেন।
র্যাব অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, তাজুল তার দুই সহযোগীকে নিয়ে মঈনের বাড়িতে যান। তারা নিজেদের কারা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মঈনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তা না হলে নিয়োগ হবে না বলে জানান। এসময় তখন মঈন ঘুষ দিয়ে চাকরি করবেন না বলে জানালে তাজুল ও তার সহযোগীরা চলে আসেন। এরপর কুমিল্লার তাজুল ইসলাম হবিগঞ্জের মঈনের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে কারারক্ষী পদে চাকরি নেন।
এদিকে ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনপ্রাপ্তির জন্য এনআইডির দরকার হয়। তখন তাজুল কারারক্ষী পদে উত্তীর্ণ মঈন খানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি আইডি কার্ড তৈরি করেন। পরে ২০২০ সালে সিলেট বিভাগে ২০০ জন কারারক্ষী বেআইনিভাবে কাজ করছেন- এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসলে তদন্তে নামে কর্তৃপক্ষ। তখন হবিগঞ্জের মাধবপুরে মঈন উদ্দিন খানের তথ্যও যাচাই করা হয়।
একপর্যায়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে কারারক্ষী মঈন উদ্দন খান সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা কি না, তা জানতে চান। ইউপি চেয়ারম্যান জবাবে জানান, মঈন উদ্দিন খান কারারক্ষী নন। তিনি তাদের এলাকার ছেলে, ওষুধ ব্যবসায়ী। তখন কারা কর্তৃপক্ষের এ তৎপরতা বুঝতে পেরে ২০২১ সালের ১৫-২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি নিলেও এরপর চাকরিতে যোগদান করেননি তাজুল ইসলাম।
এদিকে মঈন উদ্দিন খান তার চাকরিবঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরি দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। একপর্যায়ে চাকরি না পেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর তদন্ত কমিটি প্রতারক তাজুল ইসলামকে ডাকলেও তিনি হাজির হননি। এ ঘটনা গত বছরের ৪ আগস্ট প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চাকরি করার অভিযোগে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানায় মামলা করে কারা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে র্যাবের কাছে সহযোগিতাও চাওয়া হয়। ১২ জানুয়ারি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাজুলের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া বাজার থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।