মীরাবাজারে ডাকাত ভেবে পুলিশসহ ৪ যুবককে গণপিটুনি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:০৩:৫৯ অপরাহ্ন
মানবপাচার মামলায় ৩ নারীসহ ৫ জন জেলে
স্টাফ রিপোর্টার : ২৪ জানুয়ারী রাত ১০টা। এক বাড়িতে শোরগোলের আওয়াজ পেয়ে স্থানীয় লোকজন ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার শুরু করে। চিৎকার চেঁচেমেচির শব্দ পেয়ে আশপাশের বাসিন্দারা এগিয়ে এসে দেখেন, ওই বাড়ি থেকে কয়েকজন যুবককে বের হচ্ছেন। এ সময় স্থানীয়রা ওই যুবকদের আটক করে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি দেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবে এর আগেই ৩ যুবক পালিয়ে যায়। এ সময় আহত অবস্থায় সাগর (২৯) নামের এক যুবককে সেখান থেকে উদ্ধার করে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে জানা যায়, আহত সাগর শিল্পাঞ্চল পুলিশের সদস্য। মঙ্গলবার রাতে সিলেট নগরের মিরাবাজার আগপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মিরাবাজার আগপাড়া এলাকার প্রবাসী দুদু মিয়ার বাড়িতে সম্প্রতি এক নারী একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। ওই ফ্ল্যাটে মঙ্গলবার রাতে শোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যায়। পরে ওই বাড়ি থেকে ৪ যুবককে বেরিয়ে আসতে দেখে তাদের ডাকাত সন্দেহে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৩ নারী ও ২ যুবককে আটক করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করে। বুধবার বিকালে ওই মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত হলো- সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট এলাকার নজরুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৩১), তার ছেলে মুন্না আহমদ (১৮) ও সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার কাশিকাপন গ্রামের মো. আব্দুল মতিন তালুকদারের ছেলে মাসুদ আহমদ তালুকদার, জৈন্তাপুর উপজেলার ফেরিঘাট গ্রামের আব্দুল করিমের মেয়ে সুলতানা বেগম (২৪) ও নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বেপারিবাড়ি গ্রামের মো. আজিজুল হকের মেয়ে প্রিয়া মনি (১৮)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের বলেন, ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানো হতো বলে জানা গেছে। আহত যুবক শিল্পাঞ্চল পুলিশ সদস্য বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, ৮৫/বি নং বাড়ির মালিক দুদু মিয়া প্রবাসী। বাড়িটি দেখাশোনা করেন অন্য এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটটি ওই নারী ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। ভাড়া নেওয়ার সময় ওই নারী বলেছিলেন, তার স্বামীও প্রবাসী। এখানে আসার পর বাড়িতে অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালাতেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। ওই যুবকেরা ওই বাড়িতে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, রাতে দুদু মিয়ার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে, এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন ওই বাড়ির নিচে জড়ো হন। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে সন্দেহজনক ৪ যুবককে বেরিয়ে যেতে দেখেন তারা। পরে ওই যুবকদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের ডাকাত সন্দেহে মারধর শুরু করেন। পরে পুলিশ উপস্থিত হয়ে ওই বাড়ি থেকে নারী ও পুরুষসহ ৫ জনকে আটক করে। এ সময় পুলিশ বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি করে অসামাজিক কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করে।