অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ নেতা র্যাবের খাঁচায়, কে এই তুহিন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০২৩, ৮:০৭:০৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সিটি নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে মহড়া দেওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যুবক আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে উদ্ধার হয়নি আগ্নেয়াস্ত্র। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করেন র্যাব-৯-এর সদস্যরা।
গ্রেফতার মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিন (৩৩) সিলেট নগরীর লন্ডনী রোডের অগ্রণী-১২৭ নম্বার বাসার নুরুল আলমের ছেলে ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের অনুসারী।
গতকাল শনিবার বিকেলে বিষয়টি দৈনিক জালালাবাদকে নিশ্চিত করে র্যাব-৯-এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি আফসান-আল-আলম জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে। সে এরআগেও র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়েছিলো। আসামীকে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জুন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ৬ জুন সকালে ওয়ার্ডের নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার বাসার ফটকের সামনে আসেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক তাক করে তাকে (আবদুল্লাহ) ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন। পাশাপাশি ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরপরই সায়ীদের অভিযোগটি রিটার্নিং কর্মকর্তা পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। পুলিশ সায়ীদ মো. আবদুল্লাহর অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। গত বুধবার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর বাড়ির সামনে আফতাব ও তার সমর্থকেরা সশস্ত্র মহড়া দেওয়ার মাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তার প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
কে এই তুহিন : পুরো নাম আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিন। তার স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালীর সেনবাগে হলেও নগরীর লন্ডনি রোডে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সাথে বসবাস করে আসছেন। এলাকায় ত্রাস হিসেবে তুহিন চিহ্নিত। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মাদক, অস্ত্র, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও প্রতারণার অভিযোগে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। এপর্যন্ত প্রায় ১৫ বার গ্রেফতারও হয়েছেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার এই ছাত্রলীগ নেতা।
(ফাইল ছবি)
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে তুহিন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সভাপতি মনোনীত হন। তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদারের গ্রুপ করতেন তিনি। এরপরের দুই কমিটিতে আর স্থান হয়নি। পদ হারানোর পর গ্রুপ বদলিয়ে সিসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের অনুসারী হন তুহিন।
আফতাবের অনুসারী অবস্থায়ই ২০২১ সালের ১২ মার্চ রাতে লন্ডনি রোড থেকে ১ বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, একটি পাইপগানের ব্যারেল, একটি অস্ত্রের বাট ও একটি রামদাসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়েই ফের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করে তুহিন। সর্বশেষ গত ৮ জুন কাউন্সিলর আফতাবের পক্ষ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ’র বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে হানা দেয় তুহিন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন এই সন্ত্রাসী। এ ঘটনায় কাউন্সিলর আফতাব খানের প্রার্থীতা বাতিল করে ইসি।