কাঁঠাল নিলাম নয়, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুলাই ২০২৩, ৯:১২:৩৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। প্রাথমিকভাবে কাঁঠালের বিষয়টি সংঘর্ষের কারণ হিসেবে সামনে আসলেও এর পিছনে রয়েছে পুরোনো বিরোধ। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণেই সোমবার এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হাসনাবাদ গ্রামে দুই পক্ষের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এ দুই পক্ষ হলো মালদার মিয়া ও দীন ইসলামের পক্ষ। গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ আছে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে দুই পক্ষই নিজেদের আধিপত্য ও নেতৃত্ব দেখাতে চায় সব সময়। গ্রামে জমিজমা, মসজিদ, কবরস্থানের কমিটি নিয়েও বিরোধ আছে। দু’পক্ষের মধ্যে এরআগেও মারামারি, হামলা, মামলার ঘটনা ঘটেছে। পরে এসব ঘটনায় সালিস বৈঠকে মীমাংসা হলেও মন থেকে বিরোধ, ক্ষোভ যায়নি দু’পক্ষের লোকজনের। এরই অংশ হিসেবে সোমবার মসজিদে একটি কাঁঠাল নিলাম নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে দুপক্ষের পেছনের পুরোনো বিরোধ সামনে আসে। কাঁঠাল ইস্যু রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এতে মারা যান চারজন।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার সংঘর্ষের পর ‘কাঁঠাল’ আলোচনায় এলেও এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মাসখানেক আগে ‘লিচু’ নিয়েও বিরোধ দেখা দিয়েছিল। একপক্ষের এক শিশুকে অন্য পক্ষের আরেক লোক ‘লিচু’ বলে উপহাস করায় উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন সালিসে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। তখন সালিসের সিদ্ধান্ত ছিল, এরপর রাস্তাঘাটে দুই পক্ষের কেউ এ নিয়ে কাউকে উপহাস করলে ওই ব্যক্তিকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, এ দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গত পাঁচ বছরে ১০ থেকে ১৫ বার গ্রামে সালিস হয়েছে। প্রতিবারই মীমাংসা হয়। পরে আবার হাওরের খাসজমি, মসজিদ, কবরস্থানের জমি, জমিতে মাটি ভরাট, এসব প্রতিষ্ঠানের কমিটিসহ ছোট-বড় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আবার বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তারা। গ্রামে ৩০ বছর আগে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মালদার মিয়ার বাবা মারা যান বলে এক জনপ্রতিনিধি জানান।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূর হোসাইন বলেন, ‘কাঁঠাল তো শো, পেছনে আছে দুই গোষ্ঠীর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পুরোনো বিরোধ। পুরোনো দ্ব›দ্ব না থাকলে মসজিদে কাঁঠাল নিয়ে যেটি হয়েছে, তাতে এতো বড় ঘটনা ঘটত না।’
ঘটনার সূত্রপাত : নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা বলেন, শুক্রবার জুমআ’র নামাজের পর ইমাম ঘোষণা দেন- মসজিদে কিছু দান করা ফল আছে, যেগুলো নিলাম হবে, সবাই যেন উপস্থিত থাকেন। নামাজের পর কাঁঠালের নিলাম শুরু হয়। নিলামে কাঁঠালটি ২৫০ টাকা সর্বোচ্চ দাম দিয়ে কিনে নেন মালদার আলীর পক্ষের খসরু মিয়া। নিলাম শেষ হওয়া মাত্রই সবাইকে থামিয়ে দেন দীন ইসলাম পক্ষের আবদুল বাহার। তিনি অভিযোগ করেন, নিলামের ‘ডাক’ নিচু স্বরে হওয়ায় তিনি শুনতে পাননি। কাঁঠালের দাম তিনি আরো বেশি দিতে রাজি। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এক পক্ষ আবার নিলাম দেওয়ার জন্য দাবি করলেও অন্য পক্ষের বলে নিলাম শেষ। এনিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক গ্রামের লোকজন দুই পক্ষকে শান্ত করে সেখান থেকে বিদায় করেন। এরই জেরে সোমবার দুপক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন।
সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর সার্কেল) শুভাশিস ধর দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, গ্রামে এই দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা বিষয়ে দ্ব›দ্ব আছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়, সেগুলো আবার আপসে মীমাংসাও হয়েছে। কিন্তু বিরোধ শেষ হয় না, রয়েই যায়। পুরোনো বিরোধের জেরেই সোমবার সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।