বেড়েছে মাদক চোরাচালান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৫:৪৩ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
সিলেট সীমান্তে বেড়েছে মাদকের চোরাচালান। ওপার থেকে এপারে আসছে মাদক। জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা প্রতিদিন আসছে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এতে সিলেটজুড়ে ভয়াবহভাবে মাদক ব্যবসার বিস্তার লাভ করেছে। আর এই মাদক ব্যবসায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রতিদিনই মাদকসহ ধরা পড়ছে ব্যবসায়ী ও বহনকারীরা। এরপরও কোনভাবেই কমানো যাচ্ছে। বর্তমানে আড়াই থেকে তিন হাজারের মতো মাদক কারবারি সিলেট কারাগারে রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যরাও।
ওপার থেকে এপারে আসে মাদক : সূত্র বলছে- ভারত থেকে সীমান্ত গলিয়ে এসব মাদক এপারে আসছে। সিলেট জেলা জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় ১৫ থেকে ২০টিরও বেশি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও মদ আসছে। তবে চারটি পয়েন্টে এখন ইয়াবা পাচার জমজমাট। এরমধ্যে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট অন্যতম।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সিলেটের জকিগঞ্জের ওপারে ফেনসিডিল ও ইয়াবা’র কারখানাও আছে। করোনাকালিন সময়ে সেগুলো বন্ধ ছিলো। এখন আবার সেগুলো চালু হয়েছে। ডিমান্ড বেশি হওয়ায় কারখানা চালু হয়েছে। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, ওই সব কারখানা চালু হয়েছে কি না, জানি না। তবে সীমান্তে ফেনসিডিল পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে মাদক পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। নইলে প্রতিটি ওয়ার্ড ও গ্রামে মাদক পাওয়া যায় কি ভাবে? স্থানীয় একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতাকর্মী মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন প্রকাশ্যে। মোটা অঙ্কের টাকা মাসে উৎকৌচ পান আইনশ্রঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য।
সিলেটে নিত্যনতুন কৌশলে মাদকের চোরাচালান আসছে। কাভার্ড ভ্যান, কখনো পায়ুপথে, কখনো যানবাহনের ইঞ্জিনের কাভারে করে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে গাঁজা, ফেনসিডিল কিংবা ইয়াবা। প্রতিদিন মাদক বিরোধী অভিযান চললেও ধরা পড়ছে কম। মাদকের সহজলভ্যতায় বিপথগামী হচ্ছে সিলেটের তরুণ সমাজ। তাতে উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। তারা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, জনপ্রতিনিধিরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়লে আমরা যাবো কোথায়।
সূত্র মতে, সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত পথে মাদকের চালান ঢুকে সড়ক ও রেল পথে হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে যায়। সিলেট সীমান্ত দিয়ে ফেন্সিডিল, গাজা, ইয়াবা, ভারতীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ এসে থাকে। ব্যবসায়ীরা সিলেট নগরীকে নিরাপদ ‘ট্রানজিট’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মাদক কারবারি, নারী, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, ট্রাক চালক জনপ্রতিনিধি এমনকি পুলিশ সদস্যও। বিশেষ করে রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধিরা ইয়াবা ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে। ইতোমধ্যে ইয়াবাসহ নগরীর দরগা গেইটে আটকও হন জকিগঞ্জ পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহরিয়ার রহমান। একইভাবে ইয়াবা পাচারের ঘটনায় আটক হন জকিগঞ্জের খলাছড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য শাহিন আহমদ ও ৬নং ওয়ার্ড সদস্য শাহাব উদ্দিন।
এছাড়া ইয়াবা বিক্রির সময় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রোকন উদ্দিন ভুঁইয়া ও এক নারীসহ ৫ জনকে আটক করা হয়। মাদক, দেহ ব্যবসার অপরাধে ইতোমধ্যে তিনবার আটক হন এসআই রোকন। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাদকসহ ধরা পড়লে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে সিলেট আর্মড পুলিশে যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকে কৌশলে বের হয়ে তিনি মাদক ব্যবসা করতেন। আটক এই ৫ জন বর্তমানে জেল হাজতে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মো: জেদান আল মূছা জালালাবাদকে বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে পুলিশ। ভয়াবহ এই মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি বাড়াতে হবে। তবে অভিভাবকদেরকেও সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখার কথা বলেন তিনি।