সবজিবাহি গাড়ি লুট, এরা কারা?
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:৫৩:০৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে সড়ক থেকে চিনির চালান ছিনতাইয়ের খবর প্রায়ই শোনা যায়। চলন্ত গাড়ি আটকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকাসহ মালামাল ছিনিয়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তবে এবার চিনির বদলে সন্ত্রাসীরা হাত দিয়েছে গ্রাম থেকে আসা সবজিবোঝাই গাড়িতে। ভোরবেলা মুখোশ পরে অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নিচ্ছে ট্রাক-পিকআপ গাড়ি। প্রশ্ন হচ্ছে এরা কারা? এ ঘটনা নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত অন্তত: ২০টি সবজিবোঝাই গাড়ি ছিনতাই করা হয়েছে। এতে মালবাহী গাড়িচালকরা চরম আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। সর্বশেষ রোববার একটি পিয়াজবাহী ট্রাক ও শনিবার সবজিবাহী গাড়ি ছিনতাই করা হয়। এসব ঘটনার অভিযোগের তীর ছাত্রলীগের দিকে। তবে ছাত্রলীগ নেতারা এসব ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।
ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক এখন মূর্তমান এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পণ্যবাহী পরিবহনগুলো নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে দুর্বৃত্তরা গাড়ি আটকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না পেলে তারা পণ্য লুট করে নিচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
এদিকে একের পর এক মালবাহি গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করেছে আতঙ্ক। তারা প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়েও পাননি। তবে এবার ফুঁসে উঠেছেন সিলেটের ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে জেলা প্রশাসক বরবারে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এসময় সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপিতে ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের গ্রেফতার ও সড়কে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল নির্বিঘœ করতে সাত দিনের সময় বেঁধে দেন প্রশাসনকে। এরআগে রোববার জৈন্তাপুরের পাঁচ চাষি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
সবজি ব্যবসায়ী ও চাষিরা সাথে কথা বলে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুর থেকে আসা সবজিবাহী গাড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। জৈন্তাপুরের হরিপুর পাড়ি দিয়ে বটেশ্বর এলাকায় গাড়ি এলেই তার পিছু নেয় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। এরপর সুরমা গেট, শাহপরান, মেজরটিলা, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, নাইওরপুল, সুবহানীঘাট পর্যন্ত তারা ট্রাক ও পিকআপে থাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, চিনিবাহী ট্রাক ওই মুখোশপরা সন্ত্রাসীরা প্রথমে ছিনতাই করতো। এনিয়ে পুলিশের কাছে বার বার আবেদন জানালে কোনো কাজ হয়নি। এরপর এখন সবজি, পিয়াজ, রসুনসহ নিত্যপণ্যের মালামালবাহী গাড়িও তারা ছিনিয়ে নিচ্ছে। এতে করে সিলেটে ব্যবসা করাই দায় হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেজরটিলা এলাকায় ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তারা নিজেদের জেলা ছাত্রলীগের নেতা বলে পরিচয় দেয়। ভোররাত ও সন্ধ্যা নামলেই তারা সশস্ত্র অবস্থায় সুরমাগেট এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর চিনি কিংবা সবজিবাহী ট্রাক এলেই পিছু নেয়। আর সময় সুযোগ বুঝে তারা কখনো গাড়িসহ সবজি, আবার কখনো গাড়ি রেখে সবজি নিয়ে যায়। সুরমাগেট পুলিশ ফাঁড়ি, টিলাগড় পুলিশ পোস্ট ও সুবহানীঘাট ও উপশহর ফাঁড়ির পুলিশের যোগসূত্র রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে সবজি ব্যবসায়ী কবির আহমদ জানান, ইতোমধ্যে তার দুটি ট্রাকের মালামাল লুট হয়েছে। ১০-১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে আসা অস্ত্রধারীরা শাহপরান এলাকা পাড়ি দেয়ামাত্র তার গাড়ির গতিরোধ করে। এসময় তারা চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে চাবি নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা প্রাইভেটকারের তুলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বসিয়ে রাখে। এরপর চালকের কাছে ২০-২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় গাড়ি থেকে সবজি সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনে তুলে নিয়ে যায় তারা। শিবগঞ্জের দাদাপীরের মাজারের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
সবজি বিক্রেতা হেলাল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন থেকে তাদের মালামাল লুট করা হচ্ছে। গাড়িসহ সবজি ছিনতাই করা হচ্ছে। বেশির ভাগ সময় শিমের বিচিবাহী গাড়ি লুট করা হয়। তিনি বলেন, গাড়ি আটকিয়ে ওরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রথমে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে সবজি কিংবা গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে তারা মালামালও লুট করে নিয়ে যায়। প্রতিদিন তামাবিল রুটে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে ওই ব্যবসায়ী জানান।
নগরীর সুবহানীঘাট সবজি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. ছাদ মিয়া দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ছাত্রলীগের নাম করে একদল সন্ত্রাসী চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। রোববার রাতেও সুবহানীঘাটের মন্দির রুট থেকে পিয়াজবাহী একটি ট্রাক ছিনতাই হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এসব ঘটনার ব্যাপারে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিটি মেয়র, পুলিশের কাছে বার বার জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, চাঁদাবাজির সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারে না। শুধু অভিযোগ করলে হবে না, প্রমাণ থাকতে হবে। কেউ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করলে এর দায় ছাত্রলীগ নিতে পারে না। জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসলে তাদের পরিচয় পাওয়া যাবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র এডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।