অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না মাদক পাচার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৭:৫৯:১২ অপরাহ্ন
নিরাপদ রুট সিলেট সীমান্ত
এ টি এম তুরাব :
নেশার বড়ি ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের নতুন পথ হয়ে উঠেছে সিলেট সীমান্ত। ভারতের মিজোরাম রাজ্য থেকে আসাম ও মেঘালয় হয়ে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া জকিগঞ্জ ও বাল্লা সীমান্তের ওপারে (ভারতের অংশে) গড়ে উঠেছে ইয়াবা তৈরির ছোট ছোট কারখানা। বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র বলছে, দুই দেশের সীমান্তে আগে যারা হেরোইন, মদ ও ফেনসিডিল আনা-নেওয়া করত, তারা এখন বেশি লাভের আশায় ইয়াবা কারবার করছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় কিছু রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের যোগসাজশ রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, তৃণমূলের কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তাদের মধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের ঘটনায় পৃথক মামলা রয়েছে। তারা ইয়াবা মামলায় গ্রেফতারও হয়েছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রæয়ারী) সিলেটের বিয়ানীবাজার ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৭৬০ পিস ইয়াবাসহ ৮ জন ব্যবসায়ীকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। এরআগে গত ১০ জানুয়ারি গোলাপগঞ্জ উপজেলার চৌঘরি বাজারে অ্যাম্বুলেন্সে ইয়াবা পাচারকালে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে মাদক কেনাবেচায় যেসব বড় বড় কারবারি রয়েছেন, তাদের খুব কমই গ্রেফতার হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৪ কিলোমিটার। জকিগঞ্জ সীমান্তের উল্টো দিকে ভারতের করিমগঞ্জ ও শিলচর এলাকা। দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে একটি ছোট নদী আছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ওপার থেকে পলিথিন ব্যাগে ইয়াবা ভরে রশির সাহায্যে নদীতে ফেলে দেয়। আর এপার থেকে কারবারিরা সেটা তুলে নেয়। এভাবেই চলে ইয়াবা পাচার। সূত্র বলছে, ভারতের করিমগঞ্জের আবদুল্লাহপুরে ইয়াবার কারখানা রয়েছে।
সূত্র মতে, সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত পথে মাদকের চালান ঢুকে সড়ক ও রেল পথে হয়ে রাজধানীর ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে যায়। সিলেট সীমান্ত দিয়ে ফেন্সিডিল, গাজা, ইয়াবা, ভারতীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ এসে থাকে। ব্যবসায়ীরা সিলেট নগরীকে নিরাপদ ‘ট্রানজিট’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মাদক কারবারি, নারী, ট্রাক চালক, জনপ্রতিনিধি এমনকি পুলিশ সদস্যও।
এদিকে সিলেটে অভিযানের পরও বন্ধ হচ্ছে না সর্বনাশা ইয়াবা পাচার। নিত্যনতুন কৌশলে আসছে মাদক। ইয়াবার শীর্ষ গডফাদাররা গা-ঢাকা দিলেও অক্ষতই রয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক। সহযোগীদের মাধ্যমে তারা অব্যাহত রেখেছে এ অবৈধ ব্যবসা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায়ই ধরা পড়ছে ইয়াবার চালান। আবার বিভিন্ন সময় অভিযানে বন্ধ হওয়া মাদকের স্পটগুলো পুনরায় হয়ে উঠেছে জমজমাট।
কিভাবে এপারে আসছে মাদক : সূত্র বলছে- ভারত থেকে সীমান্ত গলিয়ে এসব মাদক এপারে আসছে। সিলেট জেলা জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় অর্ধশাতাধিক পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও মদ আসছে। তবে চারটি পয়েন্টে এখন ইয়াবা পাচার জমজমাট। এরমধ্যে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট অন্যতম। ইয়াবা কারবারিদের সিলেট সীমান্ত ব্যবহারের খবর ভারতের কাছেও রয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারত ও বাংলাদেশকে বিভাজন করেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী। ভারতের কাঁটাতারের বাইরের থাকা নদীতে এসে পড়েছে পানি নিষ্কাশনের জন্য বড় বড় সুয়ারেজ। এসব সুয়ারেজ দিয়ে কাঁটাতারের ভেতর থেকে বৃত্তকার দড়ি কপিকলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে দুই প্রান্তে সংযোগ করা হয়েছে। যেকোনো এক পাশ দিয়ে টান দিলে দড়ি ঘুরতে থাকে। ইয়াবা পাচারকারীরা এ কৌশলে ইয়াবা নিয়ে আসে দেশে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯) মুখপাত্র সহকারী পুলিশ সুপার মো. মশিহুর রহমান সোহেল দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকি। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজনকে আটক করতেও সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এখনো নিজেদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। আমরা ইয়াবাসহ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সজাগ রয়েছি।
সিলেটের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান একেবারে জিরো টলারেন্স। সিলেটকে মাদকমুক্ত রাখতে প্রত্যেক থানাকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে। ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য প্রবেশ বন্ধ করতে সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।