জগন্নাথপুরে গুদাম সংকটে ধান সংগ্রহ ব্যাহত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২৪, ৯:৩৯:০১ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সরকারি খাদ্য গুদাম সংকটে কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকেরা। অনেকটা নিরুপায় হয়ে ধান সংগ্রহ করতে লম্বা তারিখ দিয়ে ভুক্তভোগী কৃষকদের শান্তনা দিচ্ছেন খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, জগন্নাথপুরে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য ৫শ মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩টি খাদ্য গুদাম রয়েছে। এর মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে ১টি ও রাণীগঞ্জ বাজারে ২টি অবস্থিত। সারা বছর খাদ্যশস্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে কোন রকমে কার্যক্রম চালাতে পারলেও বৈশাখ মৌসুমে বোরো ধান সংগ্রহকালীন সময়ে গুদাম সংকটের বিষয়টি সামনে চলে আসে। রাণীগঞ্জে ২টি গুদাম থাকায় খাদ্যশস্য সংরক্ষণ কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও উপজেলা সদরে মাত্র ১টি গুদাম থাকায় বিশেষ করে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ গুদামের পাশে আরেকটি গুদাম নির্মাণের পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। এখানে ৫শ মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
গত ৭ মে থেকে জগন্নাথপুরে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে। এবার কৃষকদের কাছ থেকে ২৬০৮ মেট্রিকটন ধান ও ২৮৬৭ মেট্রিকটন আতপ-সিদ্ধ চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে শুধু জগন্নাথপুর সদর খাদ্যগুদামে ১৬৭৮ মেট্রিকটন ধান ও ১২৫৯ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হবে। মাত্র ৫শ টনের একটি গুদামে এতো ধান-চাল সংগ্রহ করা নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে গুদাম কর্তৃপক্ষ। আর গুদামে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকেরা লম্বা লম্বা তারিখের কবলে পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। লটারিতে বিজয়ী হয়ে আসা তালিকাভূক্ত কৃষকদের মধ্যে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গুদাম কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে ধান কিনতে লম্বা লম্বা তারিখ দিয়ে ঘুরাচ্ছে। আমরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।
সরেজমিনে ১৮ মে শনিবার জগন্নাথপুর সদর খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে আসা উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের জহিরপুর গ্রামের কৃষক জাফরান মিয়া বলেন, আমাকে গত বুধবার ধান নিয়ে আসার তারিখ দেয়া হয়েছিল। গুদামের আঙ্গিনায় আমার ধান রাখা থাকলেও আজ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারিনি। এ রকম লম্বা লম্বা তারিখের অভিযোগ এনে হতাশা প্রকাশ করেন অন্য কৃষকেরাও।
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর সদর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা দ্বীপক সূত্র ধর বলেন, সারাবছর কোনরকমে খাদ্যশস্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে চালাতে পারলেও বোরো সংগ্রহকালীন সময়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়তে হয়। নতুন আরেকটি গুদাম হলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমতাবস্থায় সংগ্রহকৃত ধান মিলিং ও চাল দেশের বিভিন্ন সরকারি কেন্দ্রে আদান-প্রদানের মাধ্যমে কার্যক্রম চলছে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা না আসায় ধান মিলিংয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ফলে সংগ্রহকৃত ধানে গুদাম মজুদ হয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৭৯ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আর মাত্র কয়েকদিন সংগ্রহ করা যাবে। এরপর ধান রাখার জায়গার অভাবে সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরমধ্যে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত কৃষকদের ধান নিয়ে আসার তারিখ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। সংগ্রহকৃত ধান মিলিংয়ে দিতে পারলে গুদামে জায়গা সংকুলান হবে। তখন চাল সংগ্রহ করা যাবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ শাহাব উদ্দিন জানান, জগন্নাথপুরে আরেকটি খাদ্য গুদাম নির্মাণের জন্য আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় এক মাস আগে সারা দেশের ন্যায় জগন্নাথপুরে গুদাম নির্মাণের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথ্য নিয়েছেন। আমরা জানিয়েছি, আরেকটি গুদাম নির্মাণ করার মতো আমাদের অতিরিক্ত জায়গা আছে। আরেকটি নতুন গুদাম নির্মাণ হলে খাদ্যশস্য সংরক্ষণে আর কোন সমস্যা থাকবে না। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম জানান, জগন্নাথপুরে আরেকটি নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব পাঠানো হবে।