দ্বিতীয় ধাপেও ভোটার খরায় ভোট
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৪, ৯:৫৬:১০ অপরাহ্ন
সিইসির দাবী, ভোটের হার ৩০ শতাংশ
জালালাবাদ রিপোর্ট : দ্বিতীয় ধাপে সিলেটের ১০টিসহ দেশের ১৫৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনেও অধিকাংশ উপজেলার ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটার খরা।ভোটার না থাকায় অলস সময় কাটান নির্বাচনী কর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গ্রাম গ্রামান্তরে চিরাচরিত নির্বাচনের আমেজ দেখা যায়নি। ইসির প্রত্যাশা ছিল দ্বিতীয় পর্বের ভোটে উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু সে লক্ষণ কেন্দ্র ঘুরে পাওয়া যায়নি।
বেলা ১টায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট কাস্টিং হয়েছে। দিনশেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। তিনি বলেন, ভোট পড়ার সুনির্দিষ্ট হার আজ বুধবার পাওয়া যাবে।তবে সিইসি বলেন, একটি বড় দল ভোট বর্জন করে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করায় উপজেলা নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে আসছেন না। এটা রাজনৈতিক সংকট।
প্রথম ধাপে সিইসি বলেছিলেন ধান কাটা ও বৈরি আবহাওয়ার কারণ ভোট কম পড়েছে। এই ধাপে আরও কম পড়ার কারণ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে ৩০ শতাংশ ভোটকে কখনওই উৎসাহব্যঞ্জক মনে করি না।
এদিকে, ভোটার কম হলেও সিলেটের ১০ উপজেলায় কোথাও বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ঘটেছে। কম ভোটারের মাঝেও জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে। জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জে ২ জন ও জৈন্তপুরে ২ জন আটক হয়েছেন। এছাড়া জৈন্তাপুরে ভোটকেন্দ্রের বুথে মোবাইল ফোন নিয়ে একসঙ্গে ৬ যুবক প্রবেশের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়।
সিলেট বিভাগে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলাগুলো হচ্ছে- সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর এবং হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা। একই দিনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলায়ও ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও দুদিন আগে সে উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
এদিকে, সিলেট জেলার তিন উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটের সেই চিরাচরিত আমেজ দেখা যায়নি। কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৪ হাজার ৪৮২ জন।
দুপুর ১২টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, ওই সকল ভোটকেন্দ্র শুধু পুলিশ ও আনসার সদস্য ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা বসে আছেন। বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একজন ভোটার আসছেন। ভোটারদের আনাগোনা একেবারেই কম রয়েছে উপজেলার মাওলানা আব্দুল লতিফ-জুলেখা গার্লস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে, অন্যান্য কেন্দ্রও একই অবস্থা।
ভোটার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ও কেন্দ্রগুলোর দূরত্ব বেশি হওয়ায় ভোটার উপস্থিত কম। সকাল সাড়ে ৯টায় জৈন্তাপুরে রাংপানি ক্যাপ্টেন রশিদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোটারের কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি। নিজপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন ভোটার এসেছেন। তবে কেন্দ্রের বাইরে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। আরও কিছু ভোটকেন্দ্রও ভোটারহীন দেখা গেছে। এর মধ্যে সকাল ১০টায় আসামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোটারের কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি।
সকাল থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে ভোটার উপস্থিতি কম। উপজেলার কদমতলা এলাকায় কথা হয় স্থানীয় এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, মানুষ কম থাকায় ভোট দিতে বেশি সময় লাগেনি। লাইনে দুই-তিন মিনিট দাঁড়িয়েই সহজেই ভোট দিতে পেরেছি। তিনি বললেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে সিলেট জেলার তিন উপজেলার মধ্যে তুলনামুলক ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। যদিও তা আশানুরুপ নয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জাল ভোট দিতে গিয়ে দুই কেন্দ্রে দুজন তরুণ-তরুণী আটক হয়েছেন। উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও উপজেলার পাড়ুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আটক হয় তারা।