কয়েক সেকেন্ডে চোরাই ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুন ২০২৪, ৮:১৭:৫০ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন খুঁজে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নাম্বার। কিন্তু চক্রটি সেই আইএমইআই নাম্বারটি পাল্টে ফেলছে ৩-৭ সেকেন্ড কিংবা এক মিনিট সময়ে। চক্রটি চুরির পর কমপক্ষে মাসখানিক সময় নিয়ে এসব মোবাইল বাজারে ছাড়ে। যাতে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তি মোবাইলের আশা ছেড়ে দেন কিংবা পুলিশের হাতে ধরা না পড়ে।
দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল চুরি-ছিনতাই ও আইএমইআই পাল্টে বিক্রি করে আসা একটি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। তার ব্যবহৃত ল্যাপটপের মাধ্যমে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সহায়তায় চোরাই মোবাইল সেটের আইএমইআই নম্বর অনেক দিন ধরেই পরিবর্তন করে আসছিলো।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার রাউয়াই উম্মর কবুল গ্রামের রফিকুল ইসলাম সেতাবের ছেলে নজিবুল ইসলাম জেবলু (২২), নগরীর লামাপাড়ার মোঃ বাচ্চু মিয়ার ছেলে মোঃ আব্দুর রহিম (২৮), বাহুবল উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মোঃ আকল মিয়ার ছেলে মোঃ মাসুদ মিয়া (২৩), দক্ষিন সুরমা উপজেলার ধরাদরপুর গ্রামের আমির আলীর ছেলে মোঃ ইমন (২২), একই উপজেলার সিলাম টিকরপাড়ার মানিক মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান (২২) ও ধরাদরপুর গ্রামের আব্দুর রজ্জাকের ছেলে আব্দুর রহমান (২২)।
গত সোমবার সিলেট নগরীর বন্দরবাজারস্থ করিম উল্লাহ মার্কেটের ৩য় তলায় একাধিক মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৩১টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ১০টি বাটন মোবাইল ফোন, ১০টি ট্যাব, ২টি পিসি, ৩টি মনিটর, ২টি কীবোর্ড, ২টি মাউস, ১টি হার্ডড্রাইভ, ২টি পেনড্রাইভ, ১টি আইএমইআই পরিবর্তনকারী ডিভাইস ও নগদ ৭৫ হাজার ৫৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে র্যাব-৯ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-৯ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো: মোমিনুল হক জিডি(পি)।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মোবাইল সিন্ডিকেট চক্রের অবৈধ মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের তৎপরতা বেড়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে নগরীর বিভিন্নস্থানে মোবাইল চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের হোতা।
চক্রটি চোরাইকৃত মোবাইল ফোনগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রæপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রেফতার জেবলু, মোবাইল ছিনতাই করে চক্রের মূলহোতা রহিম, মাসুদ মিয়ার কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতো। আর ইমন হচ্ছে মিডিয়ার দায়িত্বে। সে কারো কাছ থেকে মোবাইল ক্রয় করতো না, আবার বিক্রিও করতো না। তার কাজ হচ্ছে আইএমইআই পরিবর্তনকারীর কাছে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া গ্রেফতার মিজানুর রহমান ও আব্দুর রহমান মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা আইএমইআই পরিবর্তনের পাশাপাশি কখনো কখনো মোবাইলের কেসিন, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। এ পর্যন্ত তারা ২০ থেকে ২৫ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে।
তিনি আরো বলেন, ব্রান্ড এবং কোয়ালিটি ভেদে এসব মোবাইলের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালোমানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করে। আর অন্য মোবাইল বিভিন্ন মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ ভাবে বিক্রয় করে আসছিল।
র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে চুরি, মারামারি, হত্যার চেষ্টা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে। ইমন ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধেও থানায় মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।