ভারী বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলের শঙ্কা : বন্যা ঝুঁকিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০২৪, ৪:০৯:৩৬ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : আষাঢ় শুরু হয়েছে। বর্ষার শুরুতেই দেখা যাচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মাঝে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বৃষ্টির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেরও কয়েকটি রাজ্যে চলমান টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা ঝুঁকিতে আছে।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশের দুই বিভাগে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ ‘ভারী বৃষ্টিপাত’ ঠিকই, তবে সেই বৃষ্টির উৎস একই নয়- বরং ভিন্ন ভিন্ন।
সিলেটের বন্যা নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
বাংলাদেশের সিলেট হল মেঘনা অববাহিকার অংশ। এই অঞ্চলে এমনিতেও সারাবছর অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু সিলেটের অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাত সাধারণত বন্যা পরিস্থিতি ডেকে আনে না।
মূলত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে যদি এক নাগাড়ে চার-পাঁচদিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তখনই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শুক্রবার সন্ধ্যায় জানিয়েছিল, গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং তার আগের ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩৯০ মিলিমিটার।
চেরাপুঞ্জির পাশাপাশি গত ৮ জুন থেকে সিলেটেও থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ১৩ জুন সকাল থেকে ১৪ জুন সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলায় ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান শুক্রবার বলেন, ‘আগামী তিন থেকে পাঁচ দিনেও চেরাপুঞ্জিতে গড়ে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বা তারও বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
এদিকে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন যে গাণিতিক মডেল অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিনে সিলেট ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে।
তবে এটি কম-বেশি হতে পারে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের এই বৃষ্টিপাত সম্বন্ধে রায়হান বলেন, যেহেতু এটি ভারী বৃষ্টিপাত, সেহেতু নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির একটা সম্ভাবনা আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। চেরাপুঞ্জিতে টানা চার-পাঁচদিন বৃষ্টি হলেই সিলেটের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ওখানে বৃষ্টিপাত কমলে এখানেও বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।’
এদিকে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে, মানে মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানার পর সিলেট জেলার সাতটি উপজেলা ‘আকস্মিক বন্যা’ কবলিত হয়ে পড়েছিল।
সেবার ২৭ মে থেকে সিলেট ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি শুরু হয় এবং তা চলমান থাকে ৩০ মে পর্যন্ত।
ওই সময় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছিল, চলতি বছরের মে মাসে শুধুমাত্র সিলেট জেলায় ৭৭৫ মিলিমিটার এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৭০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তখন ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যার প্রভাবে ওই বন্যা হয়েছিল।
এই সময়ের বন্যা কি অস্বাভাবিক?
কাগজে কলমে বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ হলেও আবহাওয়া অধিদফতর আবহাওয়ার বিচারে দেশের ঋতুচক্রকে চার ভাগে বিভক্ত করে।
- শীতকাল (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি)
- প্রাক-বর্ষাকাল (মার্চ-মে)
- বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর)
- বর্ষা পরবর্তীকাল (অক্টোবর-নভেম্বর)
আবহাওয়া অফিসের হিসাবে জুনের প্রথম সপ্তাহেই বর্ষাকাল শুরু হয়েছে।
এখন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, বছরের এই সময়ে, মানে প্রাক-বর্ষাকাল ও বর্ষাকালের মাঝামাঝিতে বন্যা হলে সেটি খুব বেশি অস্বাভাবিক না। কারণ ভৌগোলিক কারণেই এ সময় বন্যা হয়।
গত মে মাসে সিলেটে যে বন্যা হয়েছিল, সেটিকে আকস্মিক বন্যা বলা হয়েছিল। কিন্তু এবারের আসন্ন বন্যা ঠিক ‘আকস্মিক’ নয়।
সাধারণত যে বন্যা খুব দ্রুত সময়ে আসে, মানে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন ঘণ্টার মাঝেই যদি নদ-নদীতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন সেটিকে ‘আকস্মিক বন্যা’ বলা হয়।
আকস্মিক বন্যার সময়ে অল্প সময়ের মাঝে নদ-নদীতে প্রচুর পানি বাড়ে এবং তা সাধারণত অল্প সময়ের মাঝেই নেমে যায়, এটি স্থায়ী হয় না।
কিন্তু যেগুলো ‘রিভারাইন ফ্লাড’, সেগুলোর সময়ে পানি ধীরে ধীরে এলেও পানিটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অনেকসময় পানি নেমে যেতে সাত থেকে ১০ দিন বা আরো দীর্ঘ সময় থাকে। এতে বিস্তৃত এলাকা বন্যা কবলিত হয়।
এক্ষেত্রে এখন যে বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে, সেটিকে ‘মৌসুমী বন্যা’ বলছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কারণ ফ্ল্যাশ ফ্লাড ও রিভারাইন ফ্লাড, দুটি অনেকসময় একসাথে হয়ে যায়।