অনুপ্রবেশের চেষ্টায় সীমান্তে হাজারো রোহিঙ্গা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুন ২০২৪, ৯:৪৫:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইনে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে সামরিক বাহিনীর ওপর প্রবল হামলা চালাচ্ছে। দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধের কারণে মারা পড়ছেন রোহিঙ্গারা। এই সংঘর্ষের কারণে নাফতীরে বাসরত রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে নৌকাবোঝাই করে নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে আবার নিজ দেশে ফিরিয়ে দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার সকালে নাফ নদী দিয়ে তারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায় বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একাধিক সূত্র। তবে এ প্রসঙ্গে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বা কোনো সূত্রের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধে মংডু ও বুচিডংয়ে অর্ধলাখাধিক রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহর দখলে নিতে আরাকান আর্মি দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে চুড়ান্ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আর শহরটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। ওপারের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে এপারের সীমান্তের বাড়ি-ঘর। নদীপার দূরত্ব হলেও ভয়ে এপারের অনেকে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছেন। আর ওপারে বাস করা সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন।
অসমর্থিত সূত্রমতে, মিয়ানমারে এখনো সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এরমধ্যে রাখাইনের বুথেডংয়ে আড়াই লাখ, মংডুতে তিন লাখ এবং বাকিরা আকিয়াবসহ অন্য শহরে রয়েছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের বাস। শহরটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থল-আকাশ ও জলপথ থেকে আরাকান আর্মিকে হামলা চালায়। ফলে তুমুল যুদ্ধে ঘটছে প্রাণহানিও। এই গৃহযুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের সুদাপাড়া, হাদিবিল, নুরুল্লা পাড়া, হাইর পাড়া, মুন্নী পাড়া, সাইরা পাড়া, ফাতনজা, ফেরানপ্রু, সিকদার পাড়া, হাঁড়ি পাড়া, হেতিল্লা পাড়ার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন। এদের মধ্য অনেকে সীমান্ত দিয়ে এপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা জড়ো হয়েছে। ফলে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে টেকনাফে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা বাড়ছে।
উখিয়ার আশ্রয় ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, দুইপক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই যে কোনো সময় তারা সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে, আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করছি। নাফতীরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টেকনাফ জেটিঘাট, নাইট্যংপাড়া, দমদমিয়া, শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, নাজিরপাড়া নাফ নদীর ওপারে রাখাইনের মংডু শহরের নিকটবর্তী সীমান্তে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছেন। সুযোগ পেলেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন তারা। তবে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্ত-নাফনদে বিজিবি-কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মূলত রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতেই যুদ্ধের নামে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মাঝে নাটক চলছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করবো, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপত্তার সাথে বসবাস করতে সহযোগিতা করুন।