ইসলামী ব্যাংকগুলোতে বিদেশী বাণিজ্য কমছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৪, ৯:১১:১২ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : বিদেশী মুদ্রার সংকটে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোয় আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমে গেছে। একই সঙ্গে তারল্যসংকট থাকায় রপ্তানিকারকরাও এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি আয় কম আনছেন। ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সামগ্রিকভাবে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোয় বিদেশি বাণিজ্যের লেনদেন কমে গেছে। এ সময় রপ্তানি আয় কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি। আর আমদানি আয় কমেছে ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একসময় দেশের ব্যাংক খাতের মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বেশি আগ্রহের জায়গা ছিল শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ইসলামী ব্যাংকগুলো। সুদমুক্ত লেনদেন হওয়ায় দিন দিন ইসলামী ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়তে থাকে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর ব্যবসা দেখে কিছু কনভেনশনাল ব্যাংকও তাদের পলিসি পরিবর্তন করে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকগুলোর এই সুনামে কিছুটা দাগ পড়েছে। ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের কারণে ইসলামী ব্যাংকগুলো দুর্নামের সঙ্গে দুর্বলও হয়ে পড়ে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হতে থাকে। অনেকেই এসব ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়ে প্রচলিত ব্যাংকগুলোয় রাখছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশের পূর্ণাঙ্গ ১০টি ইসলামী ব্যাংক, কয়েকটি প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামিক শাখা ও উইন্ডোগুলোর রপ্তানি আয় এসেছে ৩২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয় কম এসেছে ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তবে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকগুলোর তুলনায় প্রচলিত ধারার ইসলামী ব্যাংকিং শাখা ও ইসলামী উইন্ডোগুলোয় রপ্তানি আয় সবচেয়ে বেশি কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোয় চলতি প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয় ছিল ২৯ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ৩০ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। সে হিসেবে রপ্তানি আয় কমেছে ১ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলোয় মার্চে রপ্তানি আয় ছিল ১ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। রপ্তানি আয় কমেছে ২ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোগুলোয় মার্চ শেষে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ৩ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। সে হিসাবে কমেছে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।
শুধু রপ্তানি আয়ই নয়। ইসলামী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কমেছে আমদানি ব্যয়ও। চলতি বছরের ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ৫৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। কমেছে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
পাশাপাশি কমেছে আমানতও। গত মার্চ প্রান্তিকে পূর্ণাঙ্গ ১০টি ইসলামী ব্যাংক এবং প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামিক শাখা ও উইন্ডোগুলোর আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
এদিকে আমানত কমলেও এসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বেড়েছে। ইসলামী ব্যাংকগুলো ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে মার্চ প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ বেশি করেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের স্থিতি ছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর তিন মাস পর (জানুয়ারি-মার্চ) ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯০০ কোটি।