প্রাইমারী স্কুল খুলছে আজ : সিলেটে ক্লাস নিয়ে শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০২৪, ১:২৬:৫০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ঈদুল আযহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটিয়ে দেশের প্রাইমারী স্কুল খুলতে যাচ্ছে আজ বুধবার। কিন্তু ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত খোদ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা চেয়েছেন অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। একই সাথে বন্যা কবলিত এলাকায় স্কুল না খোলার তাৎক্ষণিক মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন তারা।
এদিকে ৩য় ধাপের বন্যার কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীাবাজারের বন্যা কবলিত স্কুলগুলো সহসা খোলার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। দফায় দফায় বন্যার কারণে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা করছেন অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ। এছাড়া একই সময়ে শহর ও জেলায় কিছু স্কুল খোলা এবং কিছু স্কুল বন্ধ রাখা হলে শিক্ষার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই বন্যা চলাকালিন সময়ে আরো কিছুদিন প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখার দাবী জানিয়েছেন অনেকেই।
জানা গেছে, গত ১৩ জুন থেকে ঈদুল আযহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি উপলক্ষে টানা ২০ দিনের দীর্ঘ ছুটিতে যায় দেশের সব প্রাইমারী স্কুল। ছুটি শেষে আজ বুধবার খুলছে সব প্রাথমিক স্কুল। কিন্তু সাম্প্রতিক দুই ধাপের বন্যায় সিলেট বিভাগের প্রায় সাড়ে ৭ শতাধিক স্কুল প্লাবিত হয়ে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় কিছু স্কুলে সংস্কার কাজ শেষে ৩ জুলাই থেকে খোলার প্রস্ততি নেয়া হয়েছি। চলতি সপ্তাহে ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় আবারো থমকে যাচ্ছে সিলেটের প্রাথমিক শিক্ষা। বুধবার (৩ জুলাই) থেকে প্রাথমিক স্কুল খুললেও অনিশ্চিত রয়েছে সিলেটের সহস্রাধিক প্রাইমারী স্কুল খোলার বিষয়টি।
জানা গেছে, গেল জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় দফায় বন্যাকবলিত ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৭ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়গুলোতে দ্বিতীয় দফার বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। ১ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে আবারো বন্যার মূখে পড়ায় হুমকীর মুখে পড়তে ২য় ধাপের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাইমারী স্কুলগুলো।
জানা গেছে, সিলেট জেলার ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাইমারী স্কুলের মধ্যে ২য় ধাপের বন্যায় সিলেট নগরীর ২৩টি ওয়ার্ডসহ ১৩টি উপজেলায় (২০ জুন) পর্যন্ত সিলেটে ৪৮৯টি স্কুল বন্যাকবলিত হয়। এছাড়া ২২৬টি স্কুলে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৪৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২য় ধাপে বন্যাকবলিত হয় ২৫৯টি বিদ্যালয়। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় ১৪৮টি বিদ্যালয়।
৩য় ধাপে মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় জেলার কয়েক’শ প্রাইমারী স্কুল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন দৈনিক জালালাবাদকে জানান, ৩ ধাপের বন্যায় প্রাইমারীসহ সিলেটের স্কুলগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছে। ১ম ধাপে কম হলেও ২য় ধাপে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার পূর্বেই ৩য় দফায় বন্যার কবলে পড়ছে স্কুলগুলো। আগে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিরি সৃষ্টি হলেও এবার যুক্ত হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। ফলে প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্থ প্রাইমারী স্কুলের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ ২০ দিন ছুটির পর আজ বুধবার থেকে প্রাইমারী স্কুল খুলতে যাচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় স্কুল খোলা নিয়ে আমরা সন্দিহান। ইতোমধ্যে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আসবে। আমরা মৌখিকভাবে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ও প্লাবিত স্কুলগুলোতে ক্লাস বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া বন্যায় আক্রান্ত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে আরো অনেকটা সময় লেগে যেতে পারে। ২য় ধাপে সিলেটে ৪৮৯টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়েছে এবং ২২৬টি বিদ্যালয় বন্যার্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ২য় ধাপে সুনামগঞ্জ জেলায় ২৫৯টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ১৪৮টি বিদ্যালয়। ৩য় ধাপে কতটি স্কুলে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং প্লাবিত হয়েছে সেই হিসেবটা এখনো আসেনি। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে প্রতিদিনই নতুন নতুন স্কুল প্লাবিত হওয়ার খবর আসছে।