শিক্ষাকে গভীর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে কারা?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:৩০:০১ অপরাহ্ন
কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর সাথে বিক্ষোভকারী অনেক স্থানে সড়ক অবরোধ করেও তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, দাবি জানাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য হচ্ছে, ৫৬ শতাংশ কোটা কোন দেশের স্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে না। মেধাবীরা পরিশ্রম করে চাকরী পাবেন, কোটায় নয়। তাদের মতে, কোটা প্রথা কখনোই জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে না, এটা দেশের মেধাবীদের সঙ্গে এক ধরনের উপহাস।
গত ৪ জুলাই দৈনিক যুগান্তরে ‘কোটা ব্যবস্থা বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন ধ্বংস করছে’ শিরোনামে একটি বক্তব্য প্রকাশ করে। এতে বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রদত্ত কোটা সংক্রান্ত কিছু মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, সংবিধানে সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম বর্ণ গোষ্ঠী জন্মস্থানের কারণে কেউ প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য হবেন না। সরকারকে কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য, অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেজন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। অনগ্রসর যারা, নৃগোষ্ঠীকে দিতে পারি, সংখ্যালঘুকে দিতে পারি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্ম যারা থাকবেন তারা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজী নই। বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, সংবিধানকে যদি জানতে হয়, তাহলে জানতে হবে, অনগ্রসর যারা নন, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর বা এ রকম পিছিয়ে পড়া অবস্থানে নেই। তাদের বিষয়টি ঐভাবে দেখাটা সংবিধান সম্মত নয়।
জিএম কাদের আরো বলেন, আমাদের প্রথম দরকার মেধা। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সামনের বিশ্ব আমাদের সেন্টিমেন্টের ওপর থাকবে না। আমাদের কমপিটিশন করতে হবে। সেখানে মেধাকে প্রাধান্য না দিলে প্রতিযোগিতা করবো কিসের ভিত্তিতে। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে চাকরীতে কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন ধ্বংস করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চাকরী লাভে বিশেষ বিশেষ বড় অংকের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যমূলক ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠনকে ধ্বংস করে।
লক্ষণীয় যে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারী চাকরীতে প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় শ্রেণী ও চতুর্থ শ্রেণীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিলো। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য, পাঁচ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ছিলো। বাকী ৪৪ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেয়া হতো। ২০১৮ সালে মেধাবী ছাত্রদের দাবি ছিলো সরকারী চাকরীতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী থেকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যে সময় প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগের ক্ষেত্রে সব কোটা পদ্ধতির নীতি বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সার্কুলার জারি করে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে আগের মতো কোটা পদ্ধতি বহাল থাকে। পরে ২০২১ সালে সেই সার্কুলারের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রীট করেন। ঐ বছর ৫ জুন এই রীটের রায়ে সার্কুলারের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরী প্রত্যাশীরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি হচ্ছে, ২০১৮ সালের সার্কুলার বহাল রেখে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারী চাকরীতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরীতে নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক প্রশাসন নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
বলা বাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কীম নিয়ে এবং শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা যাচ্ছে। এতে এদেশের উচ্চশিক্ষা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনিতে দেশের বিদ্যমান বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে দেশ থেকে মেধা পাচার তুঙ্গে, এমন অবস্থায় পড়াশোনা যদিও আরো স্থবির কিংবা বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য তবে শিক্ষাসহ দেশের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার সমূহ আশংকা। আমরা এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের যথাযথ দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।