সুনামগঞ্জে ভেসে গেছে ৭২ কোটি টাকার মাছ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুলাই ২০২৪, ৬:২০:৫২ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যায় মাছ চাষীদের ক্ষতি না হলেও প্রথম দফায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন অনেক মাছ চাষী। সব হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা।
সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের চাষি রবীন্দ্র রায় বলেন, ১৮ জুন রাতে তিন ঘণ্টার মধ্যে আমার ২০টি পুকুর ডুবে ৪০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে রেখেও কোনও লাভ হয়নি। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেলো। একই এলাকার চাষি আব্দুল করিম বলেন, ১৮ জুন রাত ৩টার দিকে পানি বেড়ে ৫টা পুকুর ডুবে সব ভেসে যায়। এতে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। নিঃস্ব হয়ে গেছি। সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মাছ চাষি আশিষ রহমান বলেন, খাসিমারা নদীর স্রোতে আলীপুর, টেংরাটিলা, বৈঠাখাই, নোয়াপাড়া, রসরাই, সুলতানপুর, টেবলাই ও লামাসানিয়াসহ ২৫ গ্রামের তিন শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। রুই, কাতলা ও পাঙাশসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ছিল। জাল দিয়েও আটকাতে পারেননি চাষিরা। ফলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এত দ্রুত ঢলের পানি এসে লোকালয়সহ সব পুকুর ডুবে যাবে কল্পনাও করতে পারিনি জানিয়ে আলীপুর গ্রামের মাছ চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে সব মাছ ভেসে গেছে। নতুন করে মাছের পোনা কেনার টাকা নেই। সরকারি সাহায্য ছাড়া আমার পক্ষে নতুন করে মাছ চাষ করা সম্ভব নয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, জেলার ১২টি উপজেলায় ২৫ হাজার ১৭৩টি পুকুর আছে। এর মধ্যে মৎস্য অধিদফতরের অধীন ২০টি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৫৩টি, বাকি ২৫ হাজার পুকুরে ব্যক্তি মালিকানায় মাছ চাষ করা হয়। মাছ চাষি আছেন ১৬ হাজার ৫০০ জন। বন্যায় প্রায় আট হাজার পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া মাছ ও পোনার পরিমাণ চার হাজার মেট্রিক টন। এছাড়া মাছের খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতিও হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে ৭২ কোটি টাকার। এর মধ্যে অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার। সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছেন বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল করিম। তিনি বলেন, বন্যায় আট হাজার পুকুরের চার হাজার মেট্রিক টন মাছ ভেসে পাঁচ হাজার চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেন দোয়ারাবাজারের চাষিরা। কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দিরাইয়ের চাষিরা। সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ৭২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত চাষিদের কোনও সহযোগিতা দেওয়া যায়নি। আমরা প্রতিবেদন তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছি। কোনও সহযোগিতা, প্রণোদনা এলে মাছ চাষিরা পাবেন।