সেঞ্চুরী ছাড়ালো পেঁয়াজ!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০৫:১৯ অপরাহ্ন
উৎপাদন ও চাহিদা নিয়ে কৃষি বিভাগের ২ অধিদপ্তরের বক্তব্যে বিভ্রান্তি
জালালাবাদ রিপোর্ট : দেশের বাজারে দুই মাসে দাম দ্বিগুণ বেড়ে পেঁয়াজের ঝাঁজ সেঞ্চুরী ছাঁড়িয়েছে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও, মূলত কৃষি বিভাগের ২ অধিদপ্তরের গোঁজামিল তথ্যের কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না পণ্যটির।
কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টন। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লাখ। হিসাব অনুযায়ী চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ৪ লাখ মেট্রিক টন বেশি। তবে গোঁজামিল দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, সঠিক পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয় ২৫-৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৮-১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। তাই এর আমদানি করতে হয় আরও ৭-৮ লাখ মেট্রিক টন। আজ পর্যন্ত কোন কৃষক অভিযোগ করেননি, তাদের জমির পেঁয়াজ বিক্রির আগেই এতোটা নষ্ট হয়ে গেছে।
দেশের বাজারে আমদানি কম আর উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট থাকায়, বর্তমানে এর কেজি সেঞ্চুরী ছাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জানান, আলাদা করে কোনো মজুত করা পেঁয়াজ নেই কারো কাছে। গৃহস্থদের কাছে যা আছে, সেগুলোই ব্যবসায়ীদের কাছে আসতেছে। গৃহস্থরা এবার আস্তে আস্তে বাজারে পেঁয়াজ ছাড়তেছে। সব একবারে ছাড়েনি। তাই দাম উঠানামা করে।
উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে আমদানি ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন? জবাবে কৃষি বিপণন অধিদফতর বলছে, এ জন্য দেশে সাড়ে ৪শ’র বেশি মডেল ঘর তৈরি করা হয়েছে। তাতে পেঁয়াজ নষ্টের পরিমাণ কমবে আর সরবরাহ বাড়বে।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম গণমাধ্যমকে বলেন, সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে একেকটা মডেল ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে কৃষকদের জন্য। এর ফলে পেঁয়াজের নষ্ট হওয়ার পরিমাণ অনেক কমেছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে এগুলোর সুফল মিলবে এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পেঁয়াজ রফতানি করা সম্ভব হবে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হালি আর মুড়িকাটা এই দুবার উৎপাদনে না গিয়ে বছরব্যাপী উৎপাদন করার পরিকল্পনা করা উচিত। কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তাদের প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনা দিতে পারলে, গ্রীষ্মকালেও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। আর আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ৫০ ভাগ। ২০১১-১২ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২০ লাখ মেট্রিক টন আর বর্তমানে হচ্ছে তার দ্বিগুন। এরপরও ঠেকানো যাচ্ছেনা পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতা।কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। এর এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করে মেটাতে হয়।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টন। তার আগের বছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ৩৬ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার চেয়েও দেশে এখন বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে। এ হিসাবে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।
পেঁয়াজের উৎপাদন, মজুদ ও চাহিদার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যের গরমিলের কারণে বাজারে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।সিলেট নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ ১০০-১০৫ টাকা এবং আমদানীকৃত পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ভারত থেকে কম আমদানি হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এমনটা স্বীকার করেছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সিলেট অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ।