সাংবাদিক তুরাব হত্যার ৪ মাসের মাথায় পুলিশ কনস্টেবল গ্রেফতার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১০:১১ অপরাহ্ন
মূল আসামী না ধরায় ক্ষোভ
এমজেএইচ জামিল: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিলেটে পুলিশের গুলিতে সাংবাদিক এটিএম তুরাব নিহতের ৪ মাস পূর্ণ হওয়ার আগের দিন এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম উজ্জল সিনহা। তিনি তুরাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৮নং আসামী।
রোববার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই সিলেটের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মুরসালিন। সোমবার দুপুরে তাকে সিলেটে আনা হয়। তিনি ডিএমপিতে কর্মরত ছিলেন এবং সরকারের অনুমতি নিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
সাংবাদিক তুরাবের ভাই আবুল আহসান মোঃ আজরফ (জাবুর) বলেন, এখন পুলিশ কনস্টেবল উজ্জলকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গ্রেফতার করা হলো। এর আগে কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে আটকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না থাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া তুরাবের মূল খুনী সাদেক কাউসার দস্তগীর ও আজবাহার আলী শেখকে গ্রেফতারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ দিতে সমস্যা কোথায়? অবিলম্বে তুরাব হত্যা মামলার সকল আসামীকে গ্রেফতারের জোর দাবী জানান তিনি।
জানা গেছে, সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি কনস্টেবল উজ্জ্বল সিনহাকে রোববার রাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপর সোমবার দুপুরে তাকে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তুলে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেন তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের বিষয়টি আদালত সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গ্রেফতার ও রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম জানান, গ্রেফতারকৃত পুলিশ কনস্টেবল ডিএমপিতে কর্মরত ছিলেন। সরকারের অনুমতি নিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই বাদ জুমআ নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি। তখন ন্যূনতম কোন উত্তেজনা ছিলনা। নিত্যদিনের মতো সেদিনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকগণ। পাশেই ছিল পুলিশের সশস্ত্র অবস্থান। হঠাৎই অতিউৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা এসএমপির তৎকালিন সহকারী কমিশনার সাদেক কাউসার দস্তগীরের মারমুখী আচরণে বদলে যায় পরিস্থিতি। উত্তপ্ত হয়ে উঠে কোর্ট পয়েন্ট এলাকা। ঐ পুলিশের কিলিং মিশনের টার্গেটে পড়ে যান সাংবাদিক এটিএম তুরাব। পুলিশের ছোড়া ৯৮টি স্প্রিন্টারের আঘাতে নিহত হন সাংবাদিক তুরাব।
তুরাবের পরিবার ও সহকর্মীদের পক্ষ থেকে তদন্ত কর্মকর্তাকে সকল ভিডিও ফুটেজ দেয়া হয়। এমনকি সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সাংবাদিকবৃন্দ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তুরাবের হাতে থাকা মোবাইল ফোন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
হত্যাকান্ডের ৪ মাসেও মূল আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে সাংবাদিক এটিএম তুরাবের ভাই আবুল আহসান মোঃ আজরফ (জাবুর) বলেন, আমার ভাই হত্যার ৪ মাস সময় পার হয়েছে। মামলা এফআইআর হওয়ার পর আরো ৩ মাস চলে গেলো এরপরও মূল আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় আমরা বিস্মিত।
তিনি বলেন, আগে কোতোয়ালী থানার কাছে ছিল। এখন পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমাদের কাছে যা চেয়েছেন আমরা সব দিয়েছি। এরপরও পিবিআই এর বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেননি। এতে আমরা বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত।
এ ব্যাপারে পিবিআই সিলেটের ইন্সপেক্টর মুরসালিন সোমবার রাতে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আমি তদন্তভার গ্রহণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাক্ষ্য নিয়েছি। এব্যাপারে প্রাপ্ত সকল বিষয় পিবিআই হেডকোয়ার্টারকে অবগত করেছি। মামলার এজাহার পর্যালোচনা ও সেদিনের ঘটনার বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাছাই বাছাই করে সরকারের অনুমতি নিয়ে পুলিশ কনস্টেবল উজ্জল সিনহাকে ঢাকা থেকে আটক করেছি। রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করা হবে। এরপর জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
তিনি বলেন, সাবেক এডিসি দস্তগীর ও ডিসি আজবাহার আলী শেখ যদি জড়িত থাকেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে এবং বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর সেটা হবে আইনের প্রসিডিউর মেইনটেইন করে। আমাদের উপর ভরসা রাখতে হবে। পুলিশ হলেই ছাড় দেয়া হবে সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। কারণ রায়হান হত্যা মামলায় পিবিআই পুলিশের বিরুদ্ধে সত্য রিপোর্ট দিয়েছে। সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায়ও সঠিক রিপোর্ট দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।