সরকার ও ড. ইউনূসকে নিয়ে অপতথ্যের ছড়াছড়ি : রিউমার স্ক্যানারের পরিসংখ্যান
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৩:৩৪ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে পরবর্তী ১০০ দিনে ৮৯৬টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টচেক বা সত্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার। সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয় অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে।
প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের দ্বন্দ্ব দাবি করে একাধিক অপতথ্য ছড়ানো হয়। বাস্তবে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সম্পর্কেও।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে হিযবুত তাহরীরের সদস্য হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। পরে জানা যায়, ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হিযবুত তাহরীরের মাহফুজ আর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ একই ব্যক্তি নন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে নিয়ে মোট ৪২টি অপতথ্য ছড়ানো হয় বলে রিউমর স্ক্যানারের যাচাইয়ে উঠে আসে।
চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজ ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্যের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। ওই জাহাজ থেকে নিত্যপণ্য দ্রব্য এবং শিল্পের কাঁচামাল খালাস করা হলেও সেই জাহাজে অস্ত্র এসেছিল বলে গুজব ছড়ানো হয়।
সরকারের ১০০ দিনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি অপতথ্য ছড়ানো হয় সেপ্টেম্বর মাসে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট মাসে (৮-৩১ তারিখ পর্যন্ত) ২৪৬টি, সেপ্টেম্বর মাসে ২৭৬টি, অক্টোবরে ২১৬টি এবং ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়। আর ক্যাটাগরিভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, অন্তর্র্বতী সরকার নিয়ে ৯৯টি, রাজনীতি নিয়ে ২৮৮টি, জাতীয় ইস্যু নিয়ে ২৫১টি, ধর্মীয় ৭৮টি, পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে ৬২টি, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ৫৯টি, প্রতারণা নিয়ে ৩৮টি, বিনোদন নিয়ে ৩৫টি, খেলাধুলা নিয়ে ২৬টি, শিক্ষা নিয়ে ২০টি এবং অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ৩৯টি অপতথ্য ছড়ানো হয়।
ব্যক্তি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ৯০টি, শেখ হাসিনাকে নিয়ে ৭২টি, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে ১৫টি করে অপতথ্য ছড়ানো হয়। এ ছাড়া উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নিয়ে ৮টি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমকে নিয়ে ২৪টি, হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে ১৮টি এবং সাকিব আল হাসানকে নিয়ে ১১টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সর্বাধিক (৪৭টি) সেনাবাহিনী নিয়ে অপতথ্য প্রকাশ করা হয়। অন্যদের মধ্যে পুলিশ নিয়ে ১৬টি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়ে ৫টি, বিজিবি নিয়ে ২টি এবং নৌবাহিনী ১টি অপতথ্য ছড়ানো হয়।
অন্যদিকে ইস্যুভিত্তিক ছড়ানো অপতথ্যের মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক প্রোপাগান্ডা ৮৪টি, আগস্টের বন্যা নিয়ে ৮৯টি, সচিবালয়ে আনসার আন্দোলন নিয়ে ৪টি, সেপ্টেম্বরে উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ে ৭টি, সেপ্টেম্বরে পাহাড়ে সংকট নিয়ে ১৮টি, জাতিসংঘ অধিবেশন নিয়ে ১৬টি, দুর্গাপূজা নিয়ে ১৫টি, সেন্ট মার্টিন নিয়ে ৫টি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে ৭টি, ঢাকা ইসলামি মহাসম্মেলন নিয়ে ৬টি এবং শহিদ নূর হোসেন দিবস নিয়ে ১৭টি।
এই ১০০ দিনে রিউমর স্ক্যানারের আলোচিত প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার পটপরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এক্সে সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের ভয়াবহতা’, ‘আগস্টে এনায়েতপুর থানায় হামলায় কোনো গর্ভবতী নারী পুলিশ সদস্য নিহত হননি’, ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বেড়েছে গণমাধ্যমকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচারের হার’, ‘প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের দ্বন্দ্বের দাবি ঘিরে অপতথ্য প্রবাহের এক রাত’, ‘২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হিযবুত তাহরীরের মাহফুজ আর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ একই ব্যক্তি নন’, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজ ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্যের ছড়াছড়ি।’
হিন্দু হওয়ার জন্য নয়, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নওগাঁ মেডিকেল কলেজে নতুন নিয়োগ পাওয়া অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কান্তা রায় রিমিকে অপসারণের দাবিতে ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তার অপসারণ দাবি করা হয় বলে অপতথ্য ছড়িয়ে পড়ে। রিউমার স্ক্যানার বিষয়টি যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি তার প্রতিবেদনে ওই কলেজের দুজন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীর বক্তব্য নিয়েছে। শিক্ষার্থী সৌভিক ধর চৌধুরী বলেন, ধর্মীয় কোনো ইস্যুতে অপসারণের দাবি করা হয়নি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি তথ্য।
আরেক সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী প্রশ্মিতা বিশ্বাস বলেন, এখানে ধর্মের যে বিষয়টি বলা হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।