শেষ অগ্রাহায়ণে নেমেছে তাপমাত্রা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৩০:৫১ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গলে ১২.২, সিলেট নগরে ১৫ ডিগ্রী * ডিসেম্বর লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড় ও শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা
স্টাফ রিপোর্টার : শেষ অগ্রাহায়ণে শ্রীমঙ্গলসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে গত কয়েকদিনে তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়তে দেখা গেছে। সূর্যের দেখা না মেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে করে খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। সিলেট নগরেও নামছে তাপমাত্রা।
শ্রীমঙ্গলে গতকাল বুধবার তাপমাত্রা নেমেছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। বৃষ্টির মতো ঝরা কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় জবুথবু এ জেলার মানুষ। সিলেট নগরে তাপমাত্রা নেমেছে ১৫ ডিগ্রীতে। অন্যদিকে, উত্তরের জেলা নওগাঁর বদলগাছীতে তাপমাত্রা নেমেছে ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে।
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি জানান: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চায়ের রাজধানীখ্যাত হাওর, পাহাড়, প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বেড়েছে শীতের প্রকোপ। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা থাকে পুরো উপজেলা। দিনের বেশিরভাগ সময় মিলেছে না সূর্যের দেখা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বেলা ২টা) সূর্যের আলো দেখা যায়নি।শ্রীমঙ্গল উপজেলায় গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাস্তায় মানুষের চলাচলও কমেছে। ঘন কুয়াশার কারণে শহরের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে গতি কমিয়ে চলাচল করছে দূরপাল্লার যানবাহনসহ, মিনিবাস, সিএনজি, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল।
সরজমিনে দেখা গেছে, কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসের কারণে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই। তবে খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবিকার তাগিদে সকালেই বেরিয়েছেন কাজে। দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নি¤œআয়ের মানুষ। বিশেষ করে হাওর পাড়ের বোরো চাষী, দিনমজুর ও চা বাগানের শ্রমিকরা ঠান্ডা প্রকোপে পড়ছেন চরম বিপাকে। স্থানীয়রা বলছেন, খুবই ঠান্ডা পড়েছে। তার মধ্যে ঘন কুয়াশার কারণে অন্ধকারের মতো লাগছে। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে ঠান্ডার কারণে।
এদিকে, শীতের কারণে উপজেলায় বেড়েছে বিভিন্ন শীতজনিত রোগব্যাধি। শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগীর ভিড়। শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা শীতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৩ থেকে ১৮ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী মো: আনিসুর রহমান বলেন, বুধবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন। এমন অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শীত বা ঠান্ডা কিছুটা বেশি অনুভূত হলেও আপাতত আগামী ১০ দিন শৈত্যপ্রবাহের কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি। কিন্তু এই কয়দিন দেশের অন্যান্য অঞ্চলের স্বাভাবিক ঠান্ডা অনুভূত হলেও উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা নামতে পারে। ফলে এসব অঞ্চলে শীতও বেশি অনুভূত হতে পারে।
অপরদিকে, চলতি ডিসেম্বর মাসেই দুটি লঘুচাপ, একটি ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয়ার্ধে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে এবং জানুয়ারিতে ঠান্ডা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে। তবে আগামী ১০ দিন শীতের প্রকোপ বেশি থাকার আভাস পাওয়া গেলেও শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা দেখা যায়নি। আবহাওয়া প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহ আসতেও পারে তবে সেটি উত্তরবঙ্গেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ আরও বলেন, এ সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহ না হলেও তাপমাত্রা এর কাছাকাছি থাকবে। শৈত্যপ্রবাহ না হলেও শৈত্যপ্রবাহের মতো তাপমাত্রা অনুভূত হতে পারে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের খুব কাছাকাছি দেখা গেছে। শৈত্যপ্রবাহ বলতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া এবং একটানা কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করা বুঝায়। যদি তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায় তখন তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বিবেচনা করা হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।