কেমন হবে এ বছরের শীতকাল?
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:১১:০৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : হেমন্তের প্রায় শেষ। আর দুই দিন পরই শীতকাল শুরু। ইতিমধ্যে উত্তরাঞ্চলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী পর্যন্ত নেমেছে। সিলেটে শ্রীমঙ্গলেও ১২ ডিগ্রীতে নেমেছে। প্রায় প্রতিদিনই তাপমাত্রা নামছে। এ অবস্থায় এখন সবার কৌতুহল এ বছর কেমন পড়বে শীত?
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ৩ মাসের দীর্ঘমেয়াদি এক পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত সেই পূর্বাভাসে বলা হয়, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই তিন মাসে মোট ১২টি শৈত্যপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ করা হয়েছে, এ সময় সামগ্রিকভাবে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে।
এই সময়ের মাঝে অন্তত তিনটি, সর্বোচ্চ ৮টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে তিন-চারটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। তাপমাত্রা যদি আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে সেটাকে ধরা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
তাপমাত্রা এরচেয়ে কমে ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে হয় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। তবে শৈত্যপ্রবাহ হিসাবে ধরতে হলে এই তাপমাত্রার স্থায়িত্বকাল অন্তত তিনদিন হতে হবে। অর্থাৎ, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেও তাকে কমপক্ষে তিনদিন থাকতে হবে।
শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা নিয়ে ‘সংশয়’ :
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যদিও ১২টি শৈত্যপ্রবাহের কথা বলেছে। কিন্তু অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান এই সংখ্যাটি নিয়ে খানিকটা সংশয় প্রকাশ করেছেন।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১২টি শৈত্যপ্রবাহের বিষয়টি একটু বেশি বলা হলো কি না, আমি ঠিক জানি না। তবে যে কোনও শৈত্যপ্রবাহ যখন হয়, তখন সাধারণত তার স্থায়িত্ব হয় তিন থেকে পাঁচ দিন।
কখনও কখনও এই স্থায়িত্ব আরও বেশি হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তিন থেকে পাঁচ দিনের হিসাবে জানুয়ারি মাসে তিন থেকে চারটি শৈত্যপ্রবাহ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে দুইটি হয়। আর ডিসেম্বরের অর্ধেক চলে গেছে। ডিসেম্বরে যদি একটি শৈত্যপ্রবাহ হয়, তাহলেও হয় সাতটি।
সেই হিসাবে এ বছরের শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৮টি হতে পারে। এর বেশি কিন্তু হবে না। তবে তিন দিনের হিসাব ধরলে সেটি ভিন্ন, যোগ করেন এই আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন, ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারির তুলনায় সাধারণত জানুয়ারির শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘসময় ধরে হয়।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশেও আগেও ওই সংখ্যক শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে। বিশেষ করে জানুয়ারিতে এটা বেশি হয়। শিলাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আব্দুল মান্নান বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বাংলাদেশে সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ু মিলে মেঘের উচ্চতা বেড়ে যায়। মেঘের উচ্চতা ১২ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে শিলাবৃষ্টির মতো বিষয় হতে পারে।
যে কারণে এবার শীতের অনুভূতি বেশি হবে
এদিকে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেছেন যে এবছর শীতের অনুভূতি গতবারের চেয়ে বেশি হবে। কারণ হিসাবে তিনি বলেন- কুয়াশা এবং অতি বৃষ্টি। তিনি বলেন, বাতাসে অনেক ধুলাবালি থাকায় কুয়াশাটা বেশি হবে এবং শীতও বেশি লাগবে। সেইসাথে, এ বছর অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি ছিল। বেশি শীতের এটাও কারণ।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, প্রতিবছর শীত একরকমভাবে আসে না। শীতের প্রথমদিকে যখন শৈত্যপ্রবাহ থাকে না, তখন আমাদের এই অঞ্চলের নিম্ন স্তরে যে জলীয়বাষ্প থাকে, তা ভোরবেলা যখন তাপমাত্রা কম থাকে, তখন ঘনীভূত হয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি তৈরি করে। আজকেও সমস্র বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই জলীয়বাষ্প মাঝরাতের পর থেকে ঘনীভূত হতে থাকে এবং ভোর ৩টার পর তা সমগ্র আকাশ ঢেকে ফেলে। দিন গড়িয়ে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত থাকে সেই কুয়াশা এবং বিকাল ৩টা নাগাদ বিলীন হয়।
তিনি বলেন, মূলত, বাংলাদেশের বায়ুম-লের নিম্নস্তরের জলীয়বাষ্পর উপস্থিতির কারণেই কুয়াশার উৎপত্তি। এই ধরনের কুয়াশা বায়ুতাড়িত হয়ে স্থানান্তরিত হয় না। বাতাস থাকলে এই কুয়াশা অন্যদিকে চলে যেত। এটি শীতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ডিসেম্বর মাসে এ ধরনের অবস্থা আমরা দেখি। এবছরে আজই প্রথম এরকম হলো। কুয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতির জন্য তিনিও ধুলাবালি বা ডাস্ট পার্টিকেলকে দায়ি করেন।