৩ গ্রামের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র কোম্পানীগঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৫৮:২৭ অপরাহ্ন
নেপথ্যে মোবাইল চার্জ থেকে ভাষাগত দ্বন্দ্ব
কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি: মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া নিয়ে দু’জনের দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ে ৩ গ্রামে। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সৃষ্টি করা হয় ভাষাগত দাঙ্গার। টানা ২ দিনের দফায় দফায় মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রায় শতাধিক আহত হয়েছেন। আগের দিন শনিবার সন্ধ্যা হতে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টানা সংঘর্ষের পর ফের রোববার সকাল থেকে ফের রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা।সকালে মাইকিং করে সংঘর্ষে জড়ায় ৩ গ্রামের লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে ব্যর্থ হওয়ায় সেনাবাহিনী ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
জানা গেছে, শনিবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর পয়েন্টে একটি ফার্মেসিতে মোবাইল চার্জ দিতে যান শ্রমিক দল নেতা উপজেলার বর্ণি গ্রামের আব্দুল মজিদ বাবুল। কাঁঠালবাড়ীর ঐ ফার্মেসির লোকজন তার ফোন চার্জে থেকে সরিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরে সেটা বৃহৎ আকার ধারণ করে ভাষাগত দ্বন্দ্বে রূপ দেয়া চেষ্টা করা হয়। অনেকে মাইকিং করে সিলেটি-আবাদি (নন সিলেটি) দ্বন্দ্বের বিষয়ে অপপ্রচার করতে থাকেন। এ নিয়ে শনিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলে অপপ্রচার। এক পর্যায়ে দু’দলে বিভক্ত হয়ে ফেসবুকে চলে লেখালেখি।
এর জের ধরেই রোববার সকালে ফের মাইকে ঘোষণা দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর, বর্ণি ও কাঁঠালবাড়ী গ্রামের লোকজন একে অপরকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দেয়। উভয়পক্ষ বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একইসঙ্গে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে লিপ্ত হয় উভয়পক্ষ। এতে আহত হন আরও অন্তত ২০ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
দুইদিনের সংঘর্ষে উপজেলা সদর পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে। এতে করে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক দিয়ে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার গাড়িগুলো আটকা পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থল নিয়ন্ত্রণে নিতে না পেরে সেনাবাহিনী ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের এই ঘটনা এক পর্যায়ে সিলেটি-আবাদিতে রূপ নেয়। বর্ণি ও কোম্পানীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ থানা সদরে গেলে সেখানে কাঁঠালবাড়ি ও আশপাশ এলাকার বাসিন্দারাও সংঘর্ষে জড়ান। এসময় একপক্ষ অপরপক্ষকে বৃষ্টির মতো চারদিকে থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়েন। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত হয়ে আরো প্রায় ৭০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নেন।
এ ব্যাপারে আব্দুল মজিদ বাবুল জানান, উপজেলা শ্রমিক দলের মিছিল ও লিফলেট বিতরণ শেষে কাঁঠালবাড়ি গ্রামের একটি ফার্মেসিতে মোবাইল ফোন চার্জ দিতে যান তিনি। সেখানে ফোন কিছু সময় চার্জ দেওয়ার পর নিতে গেলে দেখেন ফোন চার্জে নাই। পরে ফার্মেসির লোকজনকে মোবাইল ফোনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন শ্রমিক দলের সভাপতি এলাইছ মেম্বর ছাড়া মোবাইল দেওয়া যাবে না। এলাইছ মেম্বারের নাম্বার মোবাইলে সেভ করা তাকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল চাইলেও তারা মোবাইল দেয়নি। পরে ফার্মেসির লোকজন মোবাইল ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে সিগারেট খেতে চাইলে আমি না করি। তখন ফার্মেসির লোকজন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এসময় শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এর প্রতিবাদ করলে কাঁঠালবাড়ি গ্রামের লোকজন তাদের সাথেও ধস্তাধস্তি শুরু করে। পরে সবাই মিলে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করে থানা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে কাঁঠালবাড়ির লোকজনের সাথে সংঘর্ষ লাগে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানান, শনিবার রাতে কোম্পানীগঞ্জে একটি দোকানে মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুজনের কথা কাটাকাটি হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষ চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এসময় বেশকিছু দোকান ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত হন অন্তত ৫০ জন। রাতে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন আর রোববার ৬০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন এখানে ভর্তি আছেন আর ওসমানী হাসপাতালে ৫ জনকে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের অবস্থা ততটা গুরুতর নয়। এছাড়া আরো ১০ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু নাম-পরিচয় দেন নি।
পরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবিদা সুলতানা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের মুরব্বীদের নিয়ে দুইপক্ষের সাথে মিটিং করেন। এ বিষয়ে আবিদা সুলতানা জানান, মিটিংয়ে দুইপক্ষকেই সংযত থাকার আহবান জানানো হয়। তারা আর কোনো সংঘাতে জড়াবেন না বলে জানিয়েছেন এবং কোনো ঝামেলা হলে তার দায়-দায়িত্ব তারাই নিবেন বলে কথা দেন। তারা যার যার গ্রামে গিয়ে সবাইকে এটা জানিয়ে দিবেন যাতে আর কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে।