গঠনেই সীমাবদ্ধ সিলেট ওয়াসা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪:০০:০৫ অপরাহ্ন
নগরে চাহিদার অর্ধেক পানি সরবরাহ
এমজেএইচ জামিল: নগরীতে বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়ছে বাড়িঘর। ফলে দিন দিন বাড়ছে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা। নগরে প্রতিদিন ৮ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন সরবরাহ করছে সাড়ে ৪ থেকে ৫ কোটি লিটার। এতে চাহিদার অর্ধেক পানিও পাচ্ছেনা নগরবাসী।
এদিকে নগরবাসীর পানির সমস্যা সমাধাণ করতে সিলেট ওয়াসা গঠনের পৌণে ৩ বছরেও শুরু হয়নি কার্যক্রম। ফলে এর সুফল পাচ্ছেনা নগরবাসী। নগরবাসীর পানির সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০২২ সালের ২ মার্চ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (সিলেট ওয়াসা) গঠন করা হয়। এর তিন মাস পর ২০২২ সালের ৫ জুন থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চার ধাপে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি বোর্ডও গঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক এ কে এম হাফিজকে বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেনের ভাগনী জামাই। নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা ডা: হাফিজ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও নাক কান গলা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে রয়েছেন। বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যূজ এই চিকিৎসক দুই মেয়াদে বিএমএ সিলেট জেলার সভাপতি ছিলেন। আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তিনি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ওয়াসা বোর্ড গঠিত হলেও এখনো হয়নি কোন সভা, শুরু হয়নি কোন কার্যক্রম। অসুস্থতাজনিত কারণে নিষ্ক্রিয় চেয়ারম্যান। তিনি পদত্যাগ করেছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। তবে এখনো নগরে স্থাপিত হয়নি ওয়াসা কার্যালয়, নিয়োগ হয়নি জনবল। এতে শুধু ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ সিলেট ওয়াসা।
সিসিকের একটি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট ওয়াসার কার্যক্রম চালু করতে সম্প্রতি একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেই আলোকে সিলেট ওয়াসা গঠনের জন্য ৬/৭ সদস্যের একটি প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। শীঘ্রই এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সিসিকের অপর একটি সূত্র বলেছে, দলীয় সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত সিলেট ওয়াসার কার্যক্রম চালুর সম্ভাবনা নেই।
জানা গেছে, ৩৩ বর্গ কিলোমিটারের সিলেট নগরীর আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯.৫ বর্গ কিলোমিটারে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাড়ানো হয় সিটি কর্পোরেশনের আয়তন। এর সাথে বেড়েছে জনসংখ্যাও। কিন্তু বাড়েনি নাগরিক সেবার মান। সুপেয় পানি পাচ্ছেনা নগরীর অর্ধেকের বেশী মানুষ। পূর্বের ২৭টি ওয়ার্ডে দৈনিক ৮ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৫ কোটি লিটারেরও কম। বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডেই এখনো স্থাপিত হয়নি পানির লাইন। এসব ওয়ার্ডে পানির দৈনিক চাহিদা ৪ কোটি লিটার। পানির এই বিশাল সংকট সমাধানে অনেকটাই নিরব সিসিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট নগরীর অর্ধেক বাসিন্দা সুপেয় পানির সংকটে। ১০ লাখ নগরবাসীর মধ্যে ৫ লাখ বাসিন্দাকে পানি সরবরাহ করতে পারছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। সিটির বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডসহ ৪২টি ওয়ার্ডে পানির চাহিদা দিনে ১২ কোটি লিটার। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে অর্ধেক। এছাড়া ১৫টি নতুন ওয়ার্ডে এখনও পানির লাইন স্থাপিত হয়নি। এতে চলতি মৌসুমে পানির সংকট বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেট ওয়াসা গঠনের পরও কার্যক্রম চালু না হওয়ায় এখনো নগরীতে পানি সরবরাহ করছে সিটি কর্পোরেশন। নগরীর পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪ টিতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে দৈনিক ৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ৫ কোটি লিটার।
জানা গেছে, নগরে পানি সরবরাহ করতে সিলেট সিটি কর্পোরশেনর (সিসিক) ১৪টি পানির পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি পানির পাম্প দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ৬ টির মতো পানির পাম্প প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না। তবে নতুন ৩ টি পাম্প বসানোর কাজ চলমান বলে জানা গেছে।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর পাঠানটুলা, বাগবাড়ি (বর্ণমালা স্কুলের ভেতরে), সাগরদিঘির পাড় ডিপিএইচ-১ ও ডিপিএইচ-২, পুলিশ লাইন, দর্শন দেউড়ি, চাষনীপীর, তোপখানা পানি শোধনাগারসহ মোট ৮টি পানির পাম্প দীর্ঘদিন ধরে অকেজো বা সম্পূর্ণ বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। এদিকে নগরীর পিটিআই স্কুলের পাম্প, সাগরদিঘির পাড় মৎস্য অফিস সংলগ্ন পাম্প, আনসার ক্যাম্প পাম্প, নয়াসড়ক খিষ্ট্রান টিলা পাম্প, শাহ মিরাজী (রা:) মাজার পাম্প, ছড়ার পাড় পাম্পসহ মোট ৬টি পাম্প পানি সরবরাহ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে অধিকাংশ পানির পাম্প অকোজো হয়ে পড়ে থাকলেও সেগুলো সংস্কার বা পুনরায় স্থাপনের কোনো পদক্ষেপ না নিলেও বাসিন্দাদের কাছ থেকে পানির বিল বাবদ প্রতি মাসে নেওয়া হয় ২০০ টাকা। সময়মতো সিটি কর দিলেও দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই পানির সরবরাহ নেই। আবার কয়েকটি এলাকায় পানির সরবরাহ থাকলেও তা খুব সীমিত পরিসরে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেট ওয়াসা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন আপডেট তথ্য নেই। আপাতত সিসিকের একজন প্রকৌশলী পানি সরবরাহের বিষয়টি দেখভাল করছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সিলেট ওয়াসা গঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর কার্যক্রম এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ডা. এ কে এম হাফিজ বলেছেন তিনি অসুস্থ মানুষ তার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।