স্বাধীনতা পরবর্তী সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত করতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানালেন ডা. শফিক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮:৩৪:৪১ অপরাহ্ন
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংঘটিত সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে একটি দল সংখ্যালঘু বলে ফায়দা লুটে নিয়েছে। তারাই তাদের ক্ষতি করেছে, সম্পদ লুটে নিয়েছে, বাড়ি ঘর দখল করেছে, নির্যাতন করেছে। তারা এসব করে ইসলামপন্থীদের উপর দায় চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। ইসলামপন্থীরা এসব করে না, অন্যের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করে না, অন্যকে নির্যাতন করে না। আমরা জাতিসংঘের কাছে দাবি জানাচ্ছি, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে যত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার সকল ঘটনার তদন্ত করে অপরাধীদের বিচার করা হোক।
ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জেলা স্কুল বড় মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত এসব কথা বলেন। জেলা আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধানের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি আলমগীর হোসেনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুুবুর রহমান বেলাল, ঠাকুরগাও জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, সাবেক শিবির সভাপতি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য দেলোয়ার হোসেন।
আরো বক্তব্য রাখেন, দিনাজপুর জেলা আমীর আনিসুর রহমান, পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমীর ইকবাল হোসাইন, হিন্দু ধর্মীয় নেতা যতীশ চন্দ্র রায়, ওলামা নেতা মুফতি হারুনুর রশিদ কাসেমী, ঠাকুরগাঁও শহর শিবির সভাপতি আসাদুল্লাহ গালিব, শহীদ আবু রায়হানের পিতা ফজলে আলম রাশেদ, ঠাকুরগাও শহর জামায়াতের আমীর শামসুজ্জামান শামীম প্রমুখ। সম্মেলনে একজন হিন্দু ধর্মীয় নেতা উপস্থিত হয়ে জামায়াত-শিবিরের আচার ব্যবহার ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করে তাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। ছোট এই বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ। কিন্তু জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে পারিনি। তাদের হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করতে পারলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত। জামায়াতের ১১ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুন, লুন্ঠন ও নির্যাতনের সাড়ে ১৫ বছর পর মানুষ স্বস্তির নিশ^াস ফেলছে। এই সাড়ে ১৫ বছরে অনেকে জীবন দিয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে, অনেকের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। জামায়াতে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের ঘর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কুরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হলো। তার জানাযায় যেন মানুষ না আসতে পারে এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করার পরও বৃষ্টির মধ্যে মানুষ জানাযায় অংশ নিয়ে তাকে বিদায় দিয়েছে।
আমীরে জামায়াত বলেন, ‘বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ স্লোগান দিয়ে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিল। তারা বুক পেতে অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়েছিল। এক মন্ত্রীকে পুলিশ বলেছিল, একটি গুলি করি একজন মরে আর চারজন দাঁড়িয়ে যায়। এমন জাতি তৈরী হওয়ায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতেও যাতে জাতির জন্য এমন ছেলেরা দাঁড়িয়ে যায় সে আহবান তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, কারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর চারদিন দেশে কোন সরকার ছিল না। ইসলামপন্থীরা চারদিন সারাদেশে পাহারা দিয়েছে। দুর্গাপূজায় গন্ডগোল করতে চেয়েছিল। আমরা জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের পূজায় পাহারা দিয়েছি। আমরা চাই না কোন ধর্মীয় উপাসনালয়ে পাহারা দেয়া লাগুক। মসজিদে পাহারা দেয়া না লাগলে মন্দিরেও যাতে পাহারা দিতে না হয় এমন নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর তাদের বিজয় বলে দাবি করেছে। সেখানে তিনি একটিবারও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেননি। তার কথার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেনি। প্রতিবেশী দেশ প্রতিবেশীর মতো থাকুক। কিন্তু তারা মাঝে মাঝে বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশের তরকারিতে লবন দিতে আসে। আমরা আমাদের তরকারিতে আমরাই লবন দিব।
তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ছাত্রদের সার্টিফিকেট দেয়া হয় কিন্তু চাকরি দেয়া হয় না। ছোট একটি দাবির জন্য রাস্তায় নেমেছিল কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না করে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হলো। অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়েছে, চোখ হারিয়ে কাতরাচ্ছে। তাদের এক অধিকারের সাথে সকল অধিকার এক হয়ে মানুষের মুক্তির আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি উল্লেখ করে তিনি ঠাকুরগাঁওবাসীর উদ্দেশে বলেন, এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি। আগামীতে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চেষ্টা চালাতে হবে। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত, ঘুষ মুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত সাম্যের দেশ গড়তে চাই। এ জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য আপনাদের দোয়া চাই, আপনাদের পাশে চাই, আপনাদের সহযোগিতা চাই, আমরা অন্যায় করলে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনবেন। আল্লাহর হুকুম থাকলে আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ জন্য তিনি ঠাকুরগাঁওবাসীর সহযোগিতা চান।
সমাবেশে হিন্দু ধর্মীয় নেতা যতীশ চন্দ্র রায় বলেন, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের আচার আচরণ ভালো। তাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে আমি সমাবেশে বক্তব্য দিতে এসেছি। বিভিন্ন ধর্মের লোকজন বিভিন্ন নামে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে। আমি কোন দল করি না। জামায়াতের সততা, ভদ্রতা ও ন¤্রতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমরা জামায়াতের মাধ্যমে সরকার গঠনের চেষ্টা করবো। কারণ তারা দুর্নীতি করে না, ঘুষ খায় না এবং অন্যায় করে না।