সিলেটে সব মেডিকেলে কমপ্লিট শাটডাউন : স্থবির চিকিৎসা সেবা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০২৫, ৮:৩৬:৩১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া চিকিৎসক পদবি ব্যবহার বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে ওসমানীসহ সিলেটের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলছে কমপ্লিট শাটডাউন। মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটের সব হাসপাতালে এই কর্মসূচি পালন করেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জরুরী সেবা ছাড়া হাসপাতালগুলোতে সবধরণের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সব হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কমপ্লিট শাটডাউন করে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
এসময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমাদের আন্দোলন হচ্ছে একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা চাই জনগণের সঠিক চিকিৎসা হোক। এটা তখনই সম্ভব হবে, যখন সঠিক ডাক্তাররা চিকিৎসা দেবেন। এখন যদি মেট্রিক পাস একজনকে ডাক্তার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে রোগীরা কী চিকিৎসা পাবে আর আমরা কী করব এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে। এ জন্য জরুরি সেবা ছাড়া সব সেবা বন্ধ আছে। আমরা বুধবারের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করব। রায় যদি পক্ষে না আসে, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি পালন করব।
এদিকে কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে বহির্বিভাগে আসা রোগীরা বিপদে পড়েছেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সুনামগঞ্জে রবিউল বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল আজকে দেখানোর জন্য। কিন্তু সুনামগঞ্জ থেকে এসে দেখতে পাই সব বন্ধ। এখন কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছিনা।
রাগিব রাবেয়া মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা হোসনে আরা বলেন, সন্তানকে দেখানোর জন্য হাসপাতালে এসে দেখি কাউন্টারও বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম প্রাইভেট চেম্বারেও নাকি রোগী দেখা বন্ধ রয়েছে। এভাবে সব বন্ধ থাকলে আমরা সাধারণ জনগণ কোথায় যাবো।
এর আগের দিন সোমবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইন্টার্ণ চিকিৎসকগণ কর্মবিরতি পালন করেন। এতে হাসপাতকালে আসা সাধারণ রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার সিলেটের সব হাসপাতালে পুরো চিকিৎসা সেবা বন্ধ হওয়া সীমাহিন দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী সাধারণ। বিশেষ করে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। সার্জারী বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার পূর্ব নির্ধারিত কোন অপারেশন করা হয়নি বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। জরুরী সেবা চালু থাকলেও চিকিৎসক ছিলেন তুলনামূলক কম।
ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা বলেন, ডাক্তার পদবি শুধুমাত্র এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রিধারীদের জন্য সীমিত রাখতে হবে। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী এমবিবিএস অথবা বিডিএস ছাড়া কেউ চিকিৎসক পরিচয় দিতে পারবে না। দ্রুত ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ এবং বিসিএসের চাকরিতে প্রবেশ বয়সসীমা ৩৪ বছর পর্যন্ত বাড়ানো। মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করতে হবে। বিএমডিসি অ্যাক্ট-২০১০-কে চ্যালেঞ্জ করে যে রিট করা হয়েছে, যার রায় বুধবার হওয়ার কথা। রায় আমাদের দাবীর বিরুদ্ধে গেলে কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সৌমিত্র চক্রবর্তী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কমপ্লিট শাটডাউনকে ঘিরে হাসপাতালের আউটডোর সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। জরুরী বিভাগে রোগী ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা আবাসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবাও চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বিষয়টি শুধু সিলেট নয়, সারাদেশের ইস্যু। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবীর ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত আছেন বলে আমরা মনে করছি।