যানজটপ্রবণ হয়ে উঠেছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৫, ২:৪৮:০৮ অপরাহ্ন
৫-৬ ঘন্টার পথ যেতে লাগছে ১০ ঘন্টা
জালালাবাদ রিপোর্ট : সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যানজট এখন নিয়মিত ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে সিলেট থেকে ঢাকায় যেতে বা আসতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন সেখানে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ২১টি পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে এখন যানজটের ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী। নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ও নানা শ্রেণীর যানবাহন মহাসড়কটিতে যাত্রী ওঠানামার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে। সেই সঙ্গে মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার কাজও চলমান। ফলে আরো সরু হয়ে যানজটপ্রবণ হয়ে উঠেছে সড়কটি। সামনের ঈদযাত্রায় তা আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে রূপগঞ্জ, ব্রাম্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন অংশের যানজট এখন নিয়মিত ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাঁচপুর থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কপথ এখন যাত্রীদের কাছে দুঃসহ যন্ত্রণার নাম। ৫-১০ মিনিটের রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
কখনো আবার যানবাহনের দীর্ঘ লাইন কাঁচপুর থেকে ভুলতা-গাউছিয়া পর্যন্ত ১০-১২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়ে যায়। এতে করে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশের অব্যবস্থাপনা, অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড, ব্যাটারিচালিত রিকশাস্ট্যান্ড, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, সিগন্যালগুলোতে চতুর্মুখী গাড়ির চাপ, শিল্পকারখানার শ্রমিকদের চলাচলের চাপ- যানজটের প্রধান কারণ।
যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়ক সংস্কারের কাজ ধীরগতির কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন অনেকে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জে অংশের ১২ কিলোমিটারের বরপা, গাউছিয়া, রূপসী, বিশ্ব রোডের ৪টি স্পট থেকে প্রতিনিয়তই থেমে থেমে যানজট সৃষ্ট হয়। রূপসী-কাঞ্চন সড়কের রূপসী বাসস্ট্যান্ড দিয়ে সিটি গ্রুপের মালবাহী ট্রাক ওঠানামা করার কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলো আটকে থাকে। সৃষ্টি হয় সীমাহীন ভোগান্তি।
কখনো কখনো মহাসড়কের যানজটের প্রভাবে এলাকার ভেতরে অলিগলিতে দেখা দেয় যানজট। ফলে হেঁটে যেতে হয় গন্তব্যস্থলে। মহাসড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলমান থাকায় যানজটের পাশাপাশি সৃষ্টি হয় ধুলাবালির প্রচণ্ড ঘূর্ণি।
মহাসড়কের তারাবো বিশ্বরোড এলাকায় কথা হয় বাস যাত্রী আউয়াল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, শিমরাইল মোড় যাওয়ার জন্য ৩০ মিনিট আগে বরপা থেকে বাসে উঠেছি। কিন্তু যানজটে পরে এখনো তারাব বিশ্বরোড পার হতে পারিনি। যানজটবিহীন সড়কে এ পথ পারি দিতে সর্বোচ্চ ৬-৭ মিনিট লাগত।
ঢাকা-সিলেট সড়কে চলাচলকারী যাতায়াত পরিবহনের বাসের যাত্রী মকবুল হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে আমার তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা। তবে বরপা আসতেই লেগেছে দুই ঘণ্টা।
মেঘলা পরিবহনের বাসচালক ফরহাদ হোসেন বলেন, এই সড়কে যানজটের কারণে বেশি ট্রিপ দিতে পারি না। এতে আমাদের আয় কমে যাচ্ছে এবং যাত্রীরাও ক্ষুব্ধ। মহাসড়কের বরপা, রূপসী ও বরাব ও হারভেস্ট এলাকায় থেমে থেমে যানজট প্রতিদিনের বিষয়। ঈদে যানবাহনের চাপ বাড়ায় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এভাবে যানজট লেগে থাকলে ঈদে বাড়তি আয় তো দূরের কথা সংসারের খরচ জোগানোই কঠিন হবে।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) আশরাফ বলেন, সড়ক সংস্কার কাজ এবং রাস্তা দখল করে বাজার বসা ও যানবাহনের চাপে যানজট দেখা দেয়। ট্রাক-লরি পার্কিংয়ের বিশৃঙ্খল অবস্থান ও সর্বোপরি আইন ভঙ্গ করে একাধিক লাইন করার কারণেও তৈরি হচ্ছে যানজট।
তিনি জানান, ঈদকে সামনে রেখে ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এক যোগে আমাদের ‘পিকেট ডিউটি টিম’ ও ‘হোনডা মোবাইল টিম’ কাজ করছে। যানজট তৈরি হওয়া স্পটগুলোর নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছে পুলিশ।
ঢাকা-সিলেট দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক। প্রতিদিনই এ পথ দিয়ে চলাচল করে সিলেট, ভৈরব, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, গাজীপুরসহ দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য গণপরিবহন। নির্মাণাধীন মহাসড়কের অনেক স্থানেই ছোট-বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় যানবাহন চলে ৫-১০ কিলোমিটার গতিতে। এতে যানজট ও ভোগান্তি যন এখন নিত্যসঙ্গী যাত্রীদের।