ওসমানীনগরে ভেজাল মিষ্টির রমরমা ব্যবসা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মার্চ ২০২৫, ৬:০০:১৩ অপরাহ্ন
মো. মুহিব হাসান, ওসমানীনগর: ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার, তাজপুর, দয়ামীর, বুরুঙ্গা, হাজিপুর, উমরপুর, ঊনিশমাইল, শেরপুর আওরঙ্গপুর বাজার, মাদার বাজার, কুরুয়া বাজার, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে মিষ্টি তৈরির কারখানাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে ভেজাল মিশ্রিত মিষ্টি সামগ্রী, চলছে রমরমা ব্যবসা।
এসব মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে মানহীন ময়দা, ভারতীয় নি¤œ মানের অবৈধ চিনি, ঘি ও পাম ওয়েল। মিষ্টি তৈরির মানহীন কাঁচামালের সাথে মেশানো হচ্ছে বিলাতি সোডা, স্যাকারিন, ফরমালিন, কেমিক্যাল জাতীয় রংসহ মানব দেহে ক্ষতিকারক বিভিন্ন উপাদান। মাসের পর মাস অপরিচ্ছন্ন একই কড়াইয়ে ভাজি করা হচ্ছে এসব খাদ্য সামগ্রী। ভাজা পোড়া শুকনো খাদ্য সামগ্রী রাখা হচ্ছে নোংরা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে বেতের টুকড়িতে এবং রসালো মিষ্টি অপরিচ্ছন্ন ড্রাম ও স্টীলের পাত্রে। মিষ্টি ও জিলাপি তৈরির জন্য যে শিরা ব্যবহার হয় তা মাসের পর মাস একই পাত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। পবিত্র রমজান মাসে রোজাদার মুসলমানরা না জেনে মানবদেহে ক্ষতিকারক উপাদান মেশানো ও নোংরা স্থানে তৈরিকৃত মিষ্টি সামগ্রী দিয়ে ইফতার করছেন প্রতিদিন।
ভেজাল মিশ্রিত এসব খাদ্য সামগ্রী দীর্ঘদিন গ্রহণের ফলে মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে দেখা দেয় স্থায়ী রোগ বালাই। অন্যদিকে এসব দোকানগুলোতে মিষ্টি বিক্রির সাথে অধিক ওজনের কার্টন, পলিথিন ও মিষ্টির শিরা দিয়ে কম মিষ্টি প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছেন।
এদিকে, স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা এসব মিষ্টির দোকান প্রতিদিনের বিক্রির ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করার নিয়ম থাকলেও মাসে একবার ভ্যাট প্রদান করে থাকে বলে বিশ^স্থ সূত্রে জানা গেছে। এতে করে সরকার প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা ভ্যাট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা যায়, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে অবস্থিত উপজেলার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক কেন্দ্র গোয়ালাবাজারে স্থানীয় ক্রেতাসাধারণ ছাড়াও আশপাশ উপজেলার সহস্রাধিক লোকজনের সমাগম ঘটে থাকে। বাজারে অভিজাত মিষ্টির শোরুমের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত মধুমিতা, মৌচাক, নিমাই, মাধবী নামের দোকান ছাড়াও আরো অনেক দোকান রয়েছে। এসব মিষ্টির দোকানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মিষ্টি সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। মধুমিতা ও নিমাই মিষ্টি ঘরের কারখানা বাজারে অবস্থিত হলেও মাধবী এবং মৌচাক নামক মিষ্টির দোকানের কারখানা দোকানের মালিকের গ্রামের বাড়িতে রয়েছে।
সরজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্থানীয় এসব মিষ্টির দোকানের কাগজের কার্টনের ওজন ১১০ গ্রাম, ১২৫ গ্রাম, ১৩০ গ্রাম ও ১৮০ গ্রাম পর্যন্ত রয়েছে এবং একটি কার্টনের দর সাড়ে ৯টাকা। ৩০০ টাকা কেজি দরে মিষ্টি বিক্রি হলে ১০০শ গ্রাম মিষ্টির দর হয় ৩০টাকা। কোন কোন দোকানে কাগজের কার্টন, পলিথিন, মিষ্টির শিরা মিলে গ্রাহককে ৩শ থেকে ৪শ গ্রাম কম দেওয়া হয়ে থাকে। এতে করে একজন গ্রাহক ১ কেজি মিষ্টি ক্রয় করলে প্রায় ৯০ টাকার কম মিষ্টি পাচ্ছেন।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে মিষ্টির দোকানের সামনে ফুটপাতে অসর্তকতার সাথে চুলা বসিয়ে জিলাপি তৈরি করে বিক্রি করা হয়, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে গোয়ালাবাজারে স্বাদ এর জিলাপি তৈরির কড়াইয়ে পড়ে দ্বগ্ধ হয়ে মারা যান ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির আহবায়ক তাজিদ বক্স লিমন নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু এরপরেও উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ফুটপাতে জিলাপি ভাজার কড়াই দেখতে পাওয়া যায়।
মধুমিতা মিষ্টি দোকানের মালিক তুষার দাস বলেন, আমি কারখানার মান উন্নত করার জন্য চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছিনা। আমার দোকানের কার্টন এতো ওজনের নয়। আমি প্রতি কার্টনে ৫০ গ্রাম বাড়তি মিষ্টি দেই।
ওসমানীনগর উপজেলা ফুড ইন্সপেক্টর মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বাজার দর দেখি, কারখানার উৎপাদনের বিষয়টি দেখিনা। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঈনুল আহসান বলেন, খাদ্য সামগ্রীতে যে রং ও ক্যামিকেল মেশানো হয় তা মাত্রা অতিক্রম করলে মানুষের কিডনি, লিভার এর ক্ষতি হয় এবং মানবদেহে ক্যান্সার হয়ে থাকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা প্রশাসনের পক্ষ বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন ও বিপনন বন্ধ করতে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।