কিডস ক্যাম্পাসে কোচিং বাণিজ্যে কাবু অভিভাবকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০০:৫২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট নগরের কাজীটুলাস্থ কিডস ক্যাম্পাস স্কুলে সরকারি বিধিনিষেধ অগ্রাহ্য করে চলছে কোচিং বাণিজ্য। ‘হোমওয়ার্ক হেল্প ক্লাব’ নামে ওই কোচিং বাণিজ্যে কাবু অভিভাবকরা। প্রতি মাসে তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিভাবকরা বলছেন, ছাত্র-ছাত্রীদের হোমওয়ার্ক করে দেয়া শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু সেটা না করে বাড়তি টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে হোমওয়ার্ক ক্লাব চালু করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুলে কিছুদিন পর পর শিক্ষক পরিবর্তনে বাচ্চাদের শিক্ষার ওপর প্রভাব পড়ছে। শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকের বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক খুবই জরুরি। কিন্তু সেই সর্ম্পক গড়ে ওঠলেই প্রিন্সিপাল জিনাত মোস্তফা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হঠাৎ শিক্ষককে বরখাস্ত করেন। ফলে বাচ্চার শিক্ষার ওপর প্রভাব পড়ে। এই স্কুলে শিক্ষক তার অধিকার নিয়ে কথা বললেই কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ে চাকরি হারান বলে জানান অভিভাবকরা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, কিডস ক্যাম্পাস স্কুলে বিভিন্ন কোচিং বাণিজ্য আর অনিয়মের জন্য স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শাফিউদ্দিন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল করিম, প্রিন্সিপাল জিনাত মোস্তফা ও এডমিশন শাখার কর্মকর্তা মুলতাহিনা চৌধুরী তুন্না দায়ী। তারা বলছেন, স্কুলে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের সুষ্পষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা অগ্রাহ্য করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুল সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে ‘হোম ওয়ার্ক হেল্প ক্লাব’ নামে কিডস ক্যাম্পাস স্কুলে কোচিং বাণিজ্য চালু করে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শাফিউদ্দিন চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল করিম ও প্রিন্সিপাল জিনাত মোস্তফার পরিকল্পনায় স্কুলে কোচিং বাণিজ্য চালু করা হয়।
স্কুলের নোটিশে দেখা গেছে, হোমওয়ার্ক হেল্প ক্লাবের সময়সূচী বেলা ১টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ১৫ মিনিট ও ফি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বিষয়ে ৫০০ টাকা। ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে পড়ানো হয় এই ক্লাবে। ৪৫ মিনিটের এই ক্লাবের জন্য মাসে অভিভাবকদের ২ হাজার টাকা ফি দিতে হচ্ছে। আর মাসিক বেতন ৩ হাজার ৫০০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি মাসে সাড়ে ৫ হাজার টাকা বেতন দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী প্রতি। এছাড়াও শিক্ষার্থী প্রতি বার্ষিক সেশন ফি নেয়া হয় ২০ হাজার টাকা। কোয়ালিটি শিক্ষা নিশ্চিত না করলেও ঠিকই পকেট কাটা হচ্ছে অভিভাবকদের।
জানা গেছে, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ শীর্ষক নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা, রোল নং, নাম ও শ্রেণি উল্লেখ করে জানাতে হবে। তবে অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এসব নীতির কোনো তোয়াক্কাই করছে না কিডস ক্যাম্পাস স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানিয়েছে, কোচিং বাণিজ্যের বাইরে এই স্কুলে শিক্ষক ছাটাই নিয়মে পরিণতে হয়েছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রি-প্রাইমারী শাখার শিক্ষক আনিশা, গ্রেড-১ এর জনৈক ক্লাস টিচার ও গ্রেড-২ এর শিক্ষক তাকিয়াসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। শ্রম আইন লঙ্ঘন করে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে কথা বলতে গেলে উল্টো ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে তাদের। স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল করিম স্বয়ং নিজে ফোন দিয়ে ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ক্রিমিন্যাল মামলা ঠুকিয়ে দেয়া হবেও বলে হুমকি দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রেড-৩ এর একজন শিক্ষার্থীর একজন অভিভাবক বলেন, প্রতিদিনের পড়াসহ সবকিছু সমাধান করে দেয়া স্কুলের শিক্ষকের দায়িত্ব। কিন্তু এটা না করে বাড়তি টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে অভিভাবকদের পকেট কাটছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। গ্রেড-২ এর একজন অভিভাবক বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। আরেক অভিভাবক বলেন, মাসিক বেতন সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিচ্ছি, তারপরেও কেন আমাদের হোম ওয়ার্কের জন্য বাড়তি ২ হাজার টাকা দিতে হবে। স্কুলে কোচিং বাণিজ্য একেবারেই অনৈতিক। এই ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
কোচিং বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কিডস ক্যাম্পাসের প্রিন্সিপাল জিনাত মোস্তফা দৈনিক জালাবাদকে বলেন, আমাদের স্কুলে কোনো কোচিং করানো হয় না। আপনাকে কে বলেছে, কোচিং করানো হয়। কোচিং বাণিজ্যের বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে জানালে প্রিন্সিপাল সরাসরি স্কুলে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এখন অফিস সময় শেষ। আপনি স্কুল সময়ের মধ্যে আসেন। এ বিষয়ে সরাসরি আপনার সঙ্গে কথা বলবো।