বিপজ্জনক দিকেই যাচ্ছে পাক-ভারত পরিস্থিতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৬:৫৭ অপরাহ্ন
‘দায়িত্বশীল সমাধানের’ আহবান যুক্তরাষ্ট্রের
জালালাবাদ রিপোর্ট : পাকিস্তান-ভারতের পরিস্থিতি বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকেই যাচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই অস্থির হয়ে উঠেছে যে সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। পরপর তিনটি রাতেই দুপক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এরমাঝে ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তানও পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ভারত পাকিস্তানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ততে পত্রিকাটি আরেকটি নিবন্ধে বলেছে, ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের উত্তেজনা শেষবার যখন সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল, তখন ভারতীয় কর্মকর্তারা এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার সম্মুখীন হতে বাধ্য হন। ওই সময় দেশটির বিশাল সামরিক বাহিনীকে অনেকটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছিল; তারা ছিল সেকেলে এবং সীমান্তে হুমকি মোকাবিলায় অপ্রস্তুত। পাকিস্তানের হাতে ২০১৯ সালে একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় লজ্জায় পড়ে যায় দেশটি।
এরমাঝে পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের ১৩০টির বেশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘এমনি এমনি সাজিয়ে’ রাখা হয়নি, এগুলো ‘শুধুই ভারতের জন্য’ রাখা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এ খবর দিয়েছে। গত শনিবার হানিফ আব্বাসি আরও বলেন, এসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রই তোমাদের (ভারতের) দিকে তাক করা আছে।
আব্বাসির এমন মন্তব্য দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে ভারত ও পাকিস্তান তিনটি যুদ্ধ করেছে। এর মধ্যে দুটি কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে। উভয় দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে। তবে বর্তমানে দুই দেশ এর ভিন্ন ভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। ভারত ও পাকিস্তান আরও কয়েকবার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এর জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন হিমালয় অঞ্চলকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
এদিকে, কাশ্মীরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পেহেলগামে হামলার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে কয়েকশ লোককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতে মুসলিম বিরোধী সেন্টিমেন্ট চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীর থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী জীবন নিয়ে তাদের বাড়ি ফিরে গেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনীতিকদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান এবং ভারতের মাটিতে হামলার পেছনে তাদের ইন্ধন রয়েছে। তবে পেহেলগামের হামলায় যে ২৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় সেটির পক্ষে ভারত কোনো শক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ তুলে ধরেনি। তারা বলছে পাকিস্তানে হামলার আগে তথ্যপ্রমাণ যোগাড় করতে তাদের আরও সময় প্রয়োজন।
পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ দুটোর মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় কিনা সেটিই এখন দুশ্চিন্তার মূল বিষয়। তবে এই উত্তেজনা যদি বাড়তেই থাকে তবে তা থামানো বেশ কঠিনই হবে।
ইতোমধ্যে ইরান ও সৌদি আরব প্রতিবেশী দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য সংকটের কারণে কিছুটা বিভ্রান্ত।
কূটনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। পরিস্থিতির ‘দায়িত্বশীল সমাধানের’ জন্য কাজ করতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। কাশ্মীরে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের সাম্প্রতিক হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি সমর্থন জানালেও প্রকাশ্যে পাকিস্তানের কোনো সমালোচনা করেনি। ভারত ২২ এপ্রিলের ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে ই-মেইল বার্তায় বলেন, এটি একটি চলমান পরিস্থিতি এবং আমরা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা একাধিক স্তরে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে দায়িত্বশীল সমাধানের পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।