আজ ইউনুস-তারেক বৈঠক : দেশে-বিদেশে কৌতূহল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৫, ১২:৩০:৫১ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : সংস্কার, নির্বাচন, জুলাই সনদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন চরমে, ঠিক সে মুহূর্তে লন্ডনে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক। দেশে-বিদেশে এই বৈঠক নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কি হতে যাচ্ছে বৈঠকে-সেদিকেই চোখ এখন দেশবাসীর।
আজ শুক্রবার (১৩ জুন) যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে হোটেল ডোরচেস্টারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকের আগে লন্ডনে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেবেন কি না জানতে চাইলে দলটির এক নেতা বলেন, পুরো বিষয়টি তারেক রহমান তত্ত্বাবধান করছেন। সুতরাং সময় এলে দেখা যাবে কারা কারা বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠকে কেটে যেতে পারে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সৃষ্ট সংকট। অবিশ^াসের কালো মেঘ দূর হয়ে যাবে।
বিএনপি বলছে, নির্বাচন নিয়ে একটু যে ধোঁয়াশা, একটু যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, নির্বাচন নিয়ে একটু যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, সেসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে আলোচনায় আগামী দিনে একটি রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হবে বৈঠকে।
এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার এবং বিচার- মূলত এ তিন ইস্যু প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মূল ফোকাস থাকবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের ওপর। তবে ডিসেম্বরে না হলে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে অর্থাৎ রোজার আগে যাতে নির্বাচনটা হয়ে যায়, সে বিষয়টিতে তারেক রহমান সর্বোচ্চ জোর দিতে পারেন বৈঠকে।
অন্যদিকে সরকারি সূত্র বলছে, সরকারও কেন আগামী এপ্রিলে নির্বাচন করতে চায়, সেটা ড. ইউনূস তার ভাষণে যেমন তুলে ধরেছেন। সংস্কার এবং বিচারের পাশাপাশি তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকেও এ বিষয়টি তিনি তুলে ধরবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যদি সেটাতে কনভিন্সড হন, তাহলে এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে। এছাড়া বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে সূত্র বলছে।
বৈঠকটি সরকার এবং বিএনপি উভয়ের জন্যই ‘সুযোগ’ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিদ্যমান অবস্থা থেকে বের হয়ে একটা নির্বাচিত স্বাভাবিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নিতে হবে। এমন অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচন হলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বৈঠককে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটি সাক্ষাৎকার রয়েছে। আমরা সবাই আশাবাদী, শঙ্কার কালো মেঘ দূর হয়ে যাবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, তারেক রহমান এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতা এবং অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান। তাঁরা যখন বসবেন, তখন বাংলাদেশের এখনকার যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, জুলাই চার্টার (জুলাই সনদ)—এগুলোর যেকোনো বিষয়ে আলাপ হতে পারে।
গত কয়েক মাসে ডিসেম্বরের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপি। এরই মধ্যে ঈদুল আজহার আগের দিন গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি ঘোষণা করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন। প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে ভাষণের পর ওই রাতেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে সরকারের এ ঘোষণার কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি। সেখানে দলটির পক্ষ থেকে এপ্রিলে নির্বাচনের বিষয়ে আপত্তির কথা জানিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
এমন অবস্থায় ঈদের দিন গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় গিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিএনপির সূত্রমতে, শুভেচ্ছা বিনিময়ের একপর্যায়ে সরকার ঘোষিত নির্বাচনের নতুন রোডম্যাপের বিষয়টি উঠে আসে। তখন খালেদা জিয়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনো ধরনের বিরোধে না জড়ানোর নির্দেশনা দেন।
এদিকে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে চলমান টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক ঘিরে দেশ-বিদেশে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও প্রত্যাশা। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই বৈঠক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
জামায়াতে ইসলামের ইউরোপের মুখপাত্র আবু বক্কর মোল্লা বলেন, তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হওয়া একটা ভালো লক্ষণ। আমরা মনে করি সংলাপ, আলোচনা চলতে থাকা উচিত। টেবিলে বসে যদি সমস্যার সমাধান করতে পারি, আমরা কেন রাজপথে আন্দোলন করব।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, আমরা একে ইতিবাচকভাবেই দেখছি। যে কোনো দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনা হতেই পারে। এটি গণতান্ত্রিক চর্চারই অংশ। তবে এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে যেন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নতুন করে বাড়তি চাপ তৈরি না হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে আলোচনা হওয়া খবুই জরুরি। বিএনপি অন্যতম প্রধান স্টেকহোল্ডার।