দুদকের চোখে অভিযুক্ত টিউলিপ: বাংলাদেশি হিসেবেই তদন্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০২৫, ৭:২৭:৩৫ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: শেখ রেহানার মেয়ে, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি এবং সদ্য পদত্যাগ করা সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। সংস্থাটির মতে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ফ্ল্যাট জালিয়াতি, কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। চলমান মামলাগুলোর পাশাপাশি আরও একটি নতুন মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও চলছে। সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, “টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে নির্বাচিত লেবার এমপি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি ব্রিটিশ সরকারের প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও তিনি পদত্যাগের ব্যাখ্যায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছিলেন, দুদকের চেয়ারম্যান প্রশ্ন তুলেছেন- “যদি নির্দোষ হন, তবে হঠাৎ মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন কেন?”
তিনি আরও বলেন, “তার আইনজীবী আমাদের কাছে চিঠি দিয়ে ‘ন্যায়বিচার ও প্রমাণের’ দাবি তুলেছেন, অথচ তিনি এখনো কোনো তলবের জবাব দেননি। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি হয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চাওয়াও অনৈতিক।”
টিউলিপের বিরুদ্ধে গুলশানে অবৈধভাবে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ এবং পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক। এক মামলায় বলা হয়, তিনি ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই একটি ফ্ল্যাট নিজের নামে রেজিস্ট্রি করান, যা ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
অপর মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে বিশাল পরিসরের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন।
দুদক চেয়ারম্যান জানান, “টিউলিপের আয়কর রিটার্নে দেখা গেছে, এক বছরেই তার স্বর্ণের পরিমাণ ১০ ভরি থেকে বেড়ে ৩০ ভরিতে দাঁড়িয়েছে, অথচ সেই সময়ে তার উল্লেখযোগ্য কোনো আয় ছিল না। এছাড়া ২০১৩ সালে একটি মাছের খামার থেকে তিনি ৯ লাখ টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছেন- এমন খামারের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।”
এছাড়া কর সংক্রান্ত আরও কিছু গরমিল পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক দাবি করলেও দুদক বলছে, তিনি কাগজপত্র অনুযায়ী এখনো বাংলাদেশের নাগরিক। চেয়ারম্যান মোমেন বলেন, “কখনো ব্রিটিশ, কখনো বাংলাদেশি- এ ধরনের দ্বৈত পরিচয় গ্রহণ আইন ও নৈতিকতার পরিপন্থী।”
তিনি যোগ করেন, “যেহেতু বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে তিনি এসব অভিযোগের আওতায় পড়েন, তাই আমরা তাকে আইনের মুখোমুখি করতেই বাধ্য।”
এদিকে টিউলিপের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, “দুদক এখনো একটি প্রামাণ্য দলিলও আমাদের হাতে দেয়নি। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে রাজনীতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা করা হচ্ছে।”
তবে দুদক জানায়, “প্রমাণ ও নথির ভিত্তিতেই” তারা এগোচ্ছে এবং প্রয়োজনে সংবাদপত্রেও নোটিশ প্রকাশ করা হবে।
১৫ জুন পাঠানো সর্বশেষ তলবি নোটিশ সরাসরি টিউলিপের পাঁচটি ঢাকাস্থ ঠিকানায় এবং সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব মেলেনি।