হামলা জোরদার ইরানের, ইসরায়েলিদের রাত কাটছে বাংকারে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০২৫, ৯:২৭:২৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ইহুদিবাদী ইসরায়েলের উপর হামলা জোরদার করেছে ইরান। একের পর এক ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করছে জেরুজালে, তেল আবিব ও হাইফা নগরে। এ অবস্থায় ইসরায়েলিদের রাত কাটছে বাংকারে-এমন চিত্র উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। অন্যদিকে, ইসরায়েলও হামলা অব্যাহত রেখেছে। খামেনির পরিণতি হতে পারে সাদ্দামের মতো- এমন হুমকিও দিয়েছে আগ্রাসী এই দেশটি।
ইরানের অভিজাত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) ইসরায়েলে একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র ও মোসাদের একটি অপারেশন পরিকল্পনা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। ইরানের আধা সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই দাবি করেছে আইআরজিসি।
এর আগে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের শহর হার্জলিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। উপকূলীয় শহরটিতে অবস্থিত একটি ‘স্পর্শকাতর’ স্থান নিশানা করা এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ‘স্পর্শকাতর’ স্থান বলতে সাধারণত কোনো সামরিক বা কৌশলগত স্থানের ইঙ্গিত দেয়।
জেরুজালেম ও তেল আবিবে বিকট বিস্ফোরণ :
উড়ে আসছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র— ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর এমন সতর্কতা জারির পরপর তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। খবর আল জাজিরার।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের বিমানবাহিনী হুমকি মোকাবিলায় প্রয়োজন বুঝে আক্রমণ প্রতিহত করছে এবং আক্রমণ চালাচ্ছে।
ওই বিবৃতি প্রকাশের প্রায় ২০ মিনিট পর সেনাবাহিনী আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে, সেসব এলাকায় উদ্ধারকারী দল তল্লাশি ও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তেল আবিব এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
দেশটির অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী বলেছে, তেল আবিবের কাছের দান জেলায় প্রাথমিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তাঁরা বেশ কয়েকটি ফোন পান। ফোনে গুশ দান এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের কথা বলা হয়। অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী ঘটনাস্থলের দিকে গেছে।
রাতে ইরান ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, দাবি ইসরায়েলের :
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গত রাতে ইরান থেকে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তিন দফায় ছোড়া হয়। লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরায়েলের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা। সময় ছিল দিবাগত রাত ১২টা, সাড়ে ৩টা ও ভোররাত সাড়ে ৪টা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত রাতে ইসরায়েলের শহুরে এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত বা হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলের এই দাবির বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আগের তিন রাতে ইসরায়েলে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত হানে। ইসরায়েলে ইরানের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এখন ইসরায়েল দাবি করছে, গত রাতে ইরানের হামলা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কম ছিল। খবর আল-জাজিরার।
ইসরায়েলিদের রাত কাটছে বাংকারে, সেখানেও আতঙ্ক :
ইসরায়েলিরা গত শুক্রবার থেকে (১৩ জুন) দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় (বাংকার) অবস্থান করছেন। ইরানের বিরুদ্ধে তেল আবিব প্রশাসন আগ্রাসী হামলা শুরু করার পর তেহরানও ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা চালাচ্ছে।
এমন পাল্টাপাল্টি হামলায় ইসরায়েলে স্বাভাবিক জনজীবন কার্যত থমকে গেছে। ইরানের হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলজুড়ে নিয়মিত সাইরেন বাজছে-মানুষ আতঙ্কে ছুটছেন ভূগর্ভের আশ্রয়কেন্দ্রে। আকাশপথে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করতেই এসব সাইরেন বাজানো হচ্ছে।
ইরান পাঁচ দিন ধরে হামলা অব্যাহত রাখায় ইসরায়েলিদের বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। অনেকে বারবার এ ছুটোছুটির ভোগান্তি এড়াতে রাতেও বাংকারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু ইরানের শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে বাংকারগুলো ইসরায়েলিদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারছে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়ার পরও আতঙ্কে দিন পার করছেন ইসরায়েলিরা।
মুঠোফোনে ইসরায়েলিদের ধারণ করা ভিডিওতে ইরানের হামলার পর বাংকারের ভেতর আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শক্তপোক্ত দেয়াল ও ছাদ ইসরায়েলিদের মাথার ওপর ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত ও অবিশ্বাসে হতবাক লোকজন সাহায্যের জন্য দিগ্বিদিক ছুটছেন।
ট্রাম্প বললেন, যুদ্ধবিরতির চেয়ে দ্বন্দ্বের ‘সত্যিকারের অবসান’ ভালো :
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের ‘সত্যিকারের অবসান’ চান বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তিনি সংঘাতের ‘সত্যিকারের অবসান’ চান-যা অস্ত্রবিরতির চেয়েও কার্যকর। তবে তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে আলোচনার প্রচেষ্টা পুরোপুরি পরিত্যাগ করাও একটি বিকল্প হতে পারে।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘একটা শেষ। সত্যিকারের শেষ। কোনো যুদ্ধবিরতি নয়। একদম শেষ করে দেওয়া। কিংবা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া-তাও ঠিক।’ তিনি জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বোঝা যাবে ইসরায়েল হামলার গতি কমাবে নাকি বাড়াবে। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা দেখতে পাবেন। এখন পর্যন্ত কেউ থামেনি। মঙ্গলবার ট্রাম্প ‘সিচুয়েশন রুমে’ জাতীয় নিরাপত্তা টিমের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিকভাবে সংঘাতে জড়ায়, তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস নিশ্চিত হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমি আশা করি তার আগেই তাদের কর্মসূচি ধ্বংস হয়ে যাবে। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অধিকারী হতে দেওয়া হবে না।
খামেনির পরিণতি হতে পারে সাদ্দামের মতো, হুমকি ইসরায়েলের :
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরিণতি সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা এ কথা জানায়। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালিয়ে ইরাকের তৎকালীন শাসক সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। ২০০৬ সালে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি ইরানের স্বৈরশাসককে সতর্ক করছি, যেন তিনি যুদ্ধাপরাধ করা এবং ইসরায়েলি নাগরিকদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া বন্ধ করেন।