থামার লক্ষণ নেই ইরান-ইসরায়েল সংঘাত : ইরানের ড্রোনে ‘বিস্মিত’ ইসরায়েল
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২৫, ১০:২২:৪০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ইসরায়েলের আগ্রাসন ও ইরানের জবাব দশম দিন পার করলো রোববার। যত দিন যাচ্ছে, সংঘর্ষের ঝাঁজ বাড়ছে। থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আবার ইসরায়েলে আক্রমণ বাড়িয়েছে ইরান। পাল্টা তেল আভিভ থেকেও একে একে উড়ে আসছে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র। দুই দেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বা হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে হামলা চলেছে মুহুর্মুহু।
ইরানের ১০ ক্ষেপণাস্ত্রের ৫টিই আঘাত হেনেছে ইসরায়েলে :
ইরান শনিবার ভোরে নতুন করে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাকে ফাঁকি দিয়ে তেল আবিব শহরের প্রাণকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে বলে দাবি করেছে তেহরান।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলের ভেতরে সামরিক ও সরবরাহ ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে বড় পরিসরের হামলা চালিয়েছে।
তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সাইরেন বেজে ওঠে। একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলের টিভি চ্যানেল ১২ ও দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইরান থেকে সকালে ১০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে।
একটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের দক্ষিণের হোলন শহরে আঘাত হানে বলে খবর পাওয়া যায়। হামলায় সেখানে একটি বহুতল ভবনে আগুন ধরে যায় এবং সেটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর খবরে বলা হয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল তাদের নতুন ‘লাইটনিং’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বসাতে শুরু করেছে। ইরানি ড্রোন ঠেকাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহৃত হবে।
জেরুজালেম পোস্ট জানায়, ইরানে ইসরায়েলের হামলার এক সপ্তাহ পার হলেও তেহরানে সরকারের কোনো অস্থিরতা দেখা যায়নি; বরং তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।
এই হামলা ছিল ইরানের ১৮তম পাল্টা হামলা। এসব হামলা ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেহরান দীর্ঘ মেয়াদে চাপ বজায় রাখতে ও আরও বৃদ্ধি করতে প্রস্তুত, যতক্ষণ না কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বলে তারা মনে করে।
ইরানের ড্রোন হামলায় ‘বিস্মিত’ ইসরায়েল :
ইরানের দুটি ড্রোন ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে পৃথক হামলা চালিয়েছে। যা অনেকটা অবাক করেছে ইসরায়েলকে। হামলার বিষয়টি স্বীকার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি একটি বিরল ঘটনা, যেখানে ইরানের একমুখী আক্রমণাত্মক ড্রোন সফলভাবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, শনিবার ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে জর্ডান সীমান্তসংলগ্ন বেইত শেইন শহরে একটি ড্রোন আঘাত হানে। এতে একটি দুইতলা বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা জানান, বিস্ফোরণে বাড়িটির পাশে বড় ধরনের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, জানালা ও দরজা উড়ে গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আডম (এমডিএ) জানিয়েছে, তারা ধ্বংসস্তূপের ভেতর তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। হতাহত কারও খোঁজ পায়নি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, ইরানের দ্বিতীয় ড্রোনটি ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি খোলা এলাকায় আঘাত হানে। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ইরানে এ পর্যন্ত নিহত ৪৩০, আহত ৩৫০০ :
ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৪৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৫০০ মানুষ। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে স্থানীয় নূর নিউজ এজেন্সি হতাহতের হালনাগাদ এ তথ্য প্রকাশ করেছে। খবর বিবিসির।
ইরানের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিনের মধ্যে নিহতের সংখ্যা নিয়ে এই প্রথম সরকারি তথ্য প্রকাশ করা হলো।
সর্বশেষ গত রোববার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে মোট ২২৪ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অধিকার সংগঠনের সংবাদমাধ্যম হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি বলেছে , নিহতের সংখ্যা ৬৫৭ জন।
এদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১৩ জুন সংঘাত শুরুর পর থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটিতে ২৪ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
নিরাপত্তা পরিষদে বাগ্বিতণ্ডা, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ :
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক পরিণত হলো এক উত্তপ্ত বাদানুবাদে। ইরান ও ইসরায়েল তাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতের দায় চাপাতে থাকে।
এদিকে বৈঠকে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধ ও সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানানো হলেও কীভাবে এগোনো উচিত, সে বিষয়ে পরিষদ কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি তাঁর দেশে ইসরায়েলের আগ্রাসনের সমর্থনে দেশটি এবং এর মিত্রদের তথাকথিত ‘অতর্কিত হামলা ও অস্তিত্বের হুমকি’র (ইরানের তরফে) যুক্তিকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের অজুহাত বলে বর্ণনা করেন।
ইরানি রাষ্ট্রদূত ইসরায়েলকে এমন একটি দেশ হিসেবে আখ্যা দেন, যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা ও অন্যান্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। বক্তব্যের সময় তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশুদের ছবি তুলে ধরেন। জবাবে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ইরান ‘ভুক্তভোগী সেজে নাটক করছে’।