‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ নিয়ে বিতর্ক : ৫ না ৮ আগস্ট
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৫, ২:০৮:৪৮ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের স্মারক হিসেবে ৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দেশে শুরু হয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পতন হয় তার নেতৃত্বাধীন সরকারের। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এই দিনটিকেই ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করে গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
তবে শুরুতেই এ নিয়ে আপত্তি তুলেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আখতার হোসেন। একদিন পর এ নিয়ে ফেইসবুকে পোষ্ট করেন জামায়াত আমীর ডা: শফিকুর রহমানও। তিনিও জানান, ৮ না ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ দিবস হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে ফেসবুকে এক পোস্টে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট না। ৫ আগস্টের সাধারণ ছাত্র–জনতার এই অর্জনকে সরকারের কুক্ষিগত করার চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না।
কাছাকাছি সময়ে এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনও। তিনি লিখেছেন, নতুন বাংলাদেশ দিবস সেদিন হবে, যেদিন জুলাই ঘোষণাপত্র আসবে, যেদিন মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে।
আর এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সন্ধ্যায় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘৮ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা শুরু হয়নি। দ্বিতীয় স্বাধীনতা নষ্টের, ছাড় দেওয়ার এবং বিপ্লব বেহাতের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস’ এবং ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস।’
এদিকে শুক্রবার (২৭ জুন) নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে জামায়াত আমীর ডা: শফিকুর রহমান লিখেন, ৮ নয়, ৫ আগস্টকেই ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করা উচিত। কারণ ঐ দিনেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়, যা ছিল ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ মানবে না ইনকিলাব মঞ্চ :
৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। সংগঠনটির মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদী বলেছেন, ‘আমরা বেঁচে থাকতে এটি হতে দেব না। সরকার যদি এমন ঘোষণা দেয়, তবে ৮ আগস্ট সারাদেশে পালিত হবে ‘বিপ্লব-বেহাত দিবস’ হিসেবে।’
শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
শরীফ ওসমান বিন হাদী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করতে চায়। কিন্তু আমাদের জাতীয় মুক্তি দিবস হলো ৫ আগস্ট। ৮ আগস্ট আবার এলো কোথা থেকে? সরকার যদি এই দিনটি চাপিয়ে দিতে চায়, আমরা সেদিন বিপ্লব-বেহাত দিবস হিসেবে পালন করবো।’
তিনি ৫ আগস্টকে ‘জাতীয় মুক্তি দিবস’ বা ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান।
এ সময় তিনি বলেন, শহীদ আবু সাইদ দিবসকে শুধু ‘আবু সাইদ দিবস’ না করে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ বা শুধুই ‘শহীদ দিবস’ ঘোষণা করা হোক, যাতে অন্যান্য শহীদের পরিবাররাও দিবসটিকে নিজেদের দাবি করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক ইসি নূরুল হুদাকে জুতার মালা পরানোর পর অনেকে এটিকে ‘মব’ বলছেন। অথচ বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণ সংগ্রামপত্রের সম্পাদক আবুল আসাদকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সন্ত্রাসীরা তার অফিসে গিয়ে দাড়ি ধরে টেনে হিঁচড়ে এনেছিল, তখন কেউ তা মব সন্ত্রাস বলেনি। এখন সুশীলতা দেখানো হচ্ছে।
শরীফ ওসমান কওমি মাদরাসার অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘শুধু আলিয়া মাদরাসা বোর্ড নয়, জুলাই অভ্যুত্থানে কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের অবদানও ছিল। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনে দিনটিকে জাতীয়ভাবে উদযাপন করা উচিত।’
তিনি জানান, আগামী ১ জুলাই ‘জুলাই সনদ’ আদায়ের দাবিতে ‘লাল মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিকেল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে তা মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত যাবে।
শেষে শরীফ ওসমান বলেন, ‘লাল মার্চে অংশ নেবেন শহীদ পরিবারের সদস্য, ছাত্রজনতা ও জুলাই যোদ্ধারা।
তারা যদি সিদ্ধান্ত নেন যে জুলাই সনদ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবেন, আমরাও তাদের সাথে থাকব।’
এদিকে, শেখ হাসিনার পতনে বড় ভূমিকা রাখা তরুণদের মিলিত প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক পার্টি (জানাপা)-ও এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, মূল ঘটনার দিন ছিল ৫ আগস্ট। ইতিহাস বিকৃতি মেনে নেওয়া যায় না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দিবস ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কেউ কেউ এটিকে পরবর্তী রাজনৈতিক ব্লক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত বলেও দেখছেন।
ৃ