ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের অচল রাজনীতি!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩০:৫০ অপরাহ্ন

সম্প্রতি মিডিয়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গোপন বৈঠক সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটি দেশজুড়ে এক ধরণের সংশয় ও ভীতি সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ২২ জুন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মেজর পদ পর্যাদার একজন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনাবাহিনী। জানা গেছে, এই গোপন বৈঠকে ৩-৪শ’ জন অংশ নেন। তারা সেখানে সরকার বিরোধী শ্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারাদেশ থেকে লোকজন একে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তারা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এ ঘটনায় ২২ জুন নেতাকর্মীসহ জনৈক সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বলা বাহুল্য, বর্তমানে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্বেও রাজধানীর বুকে আওয়ামী লীগ কর্তৃক এ ধরণের একটি বেআইনী ও রাষ্ট্রবিরোধী অনুষ্ঠানের আয়োজন অনেককে বিস্মিত করেছে। অনেকের মাঝে দেশের আইন শৃংখলা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কথা হচ্ছে, এক সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কর্তৃক এ ধরণের নাশকতামূলক পরিকল্পনা ও কর্মসূচী দলটির ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গীরই প্রকাশ। দলটি বিগত দেড় দশক যে জনবিচ্ছিন্ন একটি মাফিয়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মতো এদেশে শাসন শোষন, খুন-গুম ও নির্যাতন করেছে এবং শুধু নিজেদের কোটারি স্বার্থে কাজ করছে, তা তাদের এই গোপন মিটিং ও চক্রান্ত থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নাশকতার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা যেমন নৈরাজ্যকর তেমনি দুরাশামাত্র। বিগত কয়েক যুগে বিভিন্ন দেশে এটা প্রমাণিত হয়েছে।
ভারতে নকশালপন্থী, যুক্তরাজ্যে আইরিশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এবং শ্রীলংকার তামিলরা শত চেষ্টা করেও নিজেদের ক্ষমতাসীন করতে কিংবা কাংখিত সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। এমনকি তাদের ন্যুনতম দাবি দাওয়াও আদায় করতে সক্ষম হয়নি। শেষ পর্যন্ত জান-মালের বিপুল ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে। আর এই বিংশ শতাব্দিতে এসে আওয়ামী লীগের মতো এক সময়ের একটি গণতান্ত্রিক দল বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের চেষ্টায় নানা কর্মসূচী গ্রহণ করছে, যা রীতিমতো হাস্যকর ও নির্বুদ্ধিতা। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে থাকা সত্বেও স্বৈরাচারী হাসিনাকে জনরোষ ও গণবিক্ষোভে দেশ ছাড়তে পালাতে হয়েছে। দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার প্রতি সেই ক্ষোভ বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি গত এক বছরে। বরং তা আগের চেয়ে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ, বিবিসি ও আল জাজিরার বস্তুনিষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন ও ডকুমেন্টারীর মধ্যে দিয়ে স্বৈরশাসক হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের এক নৃশংস ও ভয়াবহ চেহারা ও চরিত্র প্রকাশ পেয়েছে। খুনি হাসিনাসহ তার খুন গুমের সহযোগীদের বিচার চলছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বিশে^র বিভিন্ন খ্যাতনামা মিডিয়া শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের খুন গুম, নির্যাতন ও অর্থ আত্মসাত-পাচারের নতুন নতুন ঘটনা প্রকাশ করছে। এক ধরণের জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশেই নয় বলা যায় বিশ^ থেকে। একমাত্র তার শাসনকালের অন্যায় অপকর্ম ও শোষনের সহযোগী ভারত ছাড়া এখন কেউই নেই তার পাশে। এ অবস্থায় দিল্লীতে পলাতক অবস্থায় থেকে বাংলাদেশে নাশকতার নির্দেশ দিয়ে সরকার পরিবর্তন কিংবা পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার আশা যে কতোটা দুরাশা, তা শেখ হাসিনা ও দলের লোকজন না বুঝলেও সচেতন ব্যক্তি মাত্রই বুঝতে পারছেন। তাই শেখ হাসিনা ও তার দলের এসব কর্মকান্ডকে অনেকে আত্মঘাতী বিভ্রান্তিকর কর্মকা- বলে আখ্যায়িত করছেন। বাংলাদেশের জনগণের মাঝে এখন স্বৈরাচার বিরোধী চেতনা পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহদের পরিবারের সদস্য ও তাদের স্বজন পরিজন বন্ধু সহকর্মীদের শোক বেদনা এখনো দগদগে ক্ষতের মতো যন্ত্রণার কারণ হয়ে আছে। এমনি অবস্থায় হাসিনার এমন নৈরাজ্য ও নাশকতার আহবান যে তাদের ক্ষোভ ও ক্রোধকে আরো বৃদ্ধি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।





