ভোটে এআই আতঙ্ক : নির্বাচনকেন্দ্রিক অপপ্রচার বেড়েছে ৮ গুণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ আগস্ট ২০২৫, ৯:৪৪:২৪ অপরাহ্ন

জালালাবাদ ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে গত কয়েক বছর ধরে যেমন নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য বিকৃতির প্রবণতাও। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন এবং অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি— এসব কিছুর সমন্বিত প্রভাবে গত বছর ভুয়া তথ্য ও অপতথ্যের স্রোত তৈরি হয়েছিল নজিরবিহীনভাবে।
গবেষক ও প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এসবের মূল চালিকা শক্তি ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। আগত ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এই এআই-নির্ভর অপপ্রচার আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা করছেন তারা।
গবেষণা সংস্থা ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানোর হার শুরুর তুলনায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে রাজনৈতিক গুজবের হার সবচেয়ে বেশি- ৪৪ শতাংশ। বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হলো, নির্বাচনকেন্দ্রিক ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে প্রায় আট গুণ।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিপফেইক ভিডিও, ভুয়া অডিও বা সাজানো সংবাদ এতটাই নিখুঁতভাবে তৈরি হচ্ছে যে সাধারণ মানুষের পক্ষে আসল-নকল শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ভুয়া কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ছে মুহূর্তের মধ্যেই, বিভ্রান্ত করছে লাখো মানুষকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. বি. এম. মইনুল হোসেন বলেন, ধরুন, কোনো রাজনৈতিক নেতার কণ্ঠস্বর নকল করে একটি ঘোষণা দেয়া হলো। মানুষ বুঝতেই পারল না এটা আসল না নকল। তখন সেই ঘোষণার ওপর ভিত্তি করেই তারা পদক্ষেপ নিতে পারে। এতে নির্বাচনের সময় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই সঠিক তথ্য যাচাইয়ের জন্য আলাদা টেকনিক্যাল সেল থাকা জরুরি। একইসঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটও থাকতে হবে, যারা ভুয়া তথ্য শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, এআই বট ব্যবহার করে ভোটারদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেই তথ্য দিয়ে প্রভাব বিস্তার করার ঝুঁকিও কম নয়। এ ধরনের অপব্যবহার নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্যরা মনে করেন, কেবল প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিলেই চলবে না, প্রয়োজন রাজনৈতিক প্রচারণায় কড়াকড়ি। তারা বলেন, যে প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাবে, তাদের কনটেন্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। আগে থেকেই উৎস যাচাই ও সত্যতা নিশ্চিত করা হবে। আর সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটের প্রধান কাজই হবে এসব নজরদারি।
তাদের মতে, এআই ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে কেবল প্রযুক্তি নয়, আইনগত কাঠামোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে আধুনিক সাইবার সেল গঠন করা, ভুয়া তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফ্যাক্ট-চেকিং সেল তৈরি করা, ডিপফেইক শনাক্তকরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রচারণামূলক কনটেন্ট আগে থেকেই ভেটিংয়ের আওতায় আনা, জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মকে সম্পৃক্ত করা।







